সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে (১৯) ধর্ষণের মামলার আসামিদের পক্ষে কোনো আইজীবী দাঁড়াননি।
মহানগর হাকিম আদালতের এপিপি খোকন কুমার দত্ত জানান, মামলায় আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত তখন আসামিদের কোনো বক্তব্য থাকলে শুনতে চান।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এটিএম ফয়েজ বলেন, আইনজীবীদের এটি ব্যক্তিগত ও নীতিগত সিদ্ধান্ত। নৈতিক অবস্থান থেকেই কোনো আইনজীবী এই জঘন্য ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি।
এ মামলায় প্রধান আসামি সাইফুর রহমান (২৮), চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর (২৫) ও পাঁচ নম্বর আসামি রবিউল ইসলামের (২৫) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার সিলেট মহানগর হাকিম ২য় আদালতে আসামিদের হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান আসামিদের প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহপরাণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মামলার তিন নম্বর আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫) এবং রনির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরো দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব-৯ এর অধিনায়ক আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাত ১০টার দিকে র্যাব-৯ এর শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের একটি দল হবিগঞ্জ সদর থেকে রনিকে গ্রেপ্তার করে। পরে রনির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিনকে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে রাজন মিয়া ও আইনুদ্দিন ঘটনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় র্যাব-৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা এএসপি ওবাইন জানান, এই ৩ আসামিকে শাহপরাণ থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
চাঞ্চল্যকর এ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও চার নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে সোমবার দুপুরে কড়া পুলিশী পাহারায় আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় সেখানে শত শত উৎসুক জনতা ভিড় করেন। সাইফুর ও অর্জুনকে আদালতে হাজির করার পর পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত লোকজন।
এ সময় আসামিদের উদ্দেশ্য করে ‘জানোয়ার, জানোয়ার’; ‘মেরে ফেল, মেরে ফেল’; ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’; ইত্যাদি স্লোগান দেন লোকজন।
মহানগর হাকিম আদালতের এপিপি খোকন কুমার দত্ত জানান, সাইফুর ও অর্জুনকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানান। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তখন সাইফুর ও অর্জুন দু’জনই আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ধর্ষণে অন্য তিনজন জড়িত বলে দাবি করে। তারা আদালতকে জানায়, তারেক, রাজন ও আইনুদ্দিন ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত।
সোমবার বিকালে মামলার পাঁচ নম্বর আসামি রবিউল ইসলামকে একই আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত রবিউলেরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে গত রবিবার ভোরে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকা থেকে আসামি সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা গ্রাম থেকে আসামি অর্জুন লস্কর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে আসামি রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১২৮ বছর আগে স্থাপিত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে শুক্রবার রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ সুরমা এলাকার এক নবদম্পতিকে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। তাদের ধরে ছাত্রাবাসের একেবারে শেষ প্রান্তে সাত নম্বর ব্লকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। পুলিশ স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে। পরে তরুণীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছয় আসামির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও দু-তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন বালাগঞ্জের চান্দাইপাড়া গ্রামের সাইফুর রহমান (২৮), সুনামগঞ্জ সদরের তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনিপাড়ার মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের অর্জুন লস্কর (২৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)।
এদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত এবং অন্যরা এমসি কলেজের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র। সাইফুর, রনি ও মাহফুজুর এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র এবং অর্জুন এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র।
মামলার আসামিরা ছাত্রলীগের ‘সক্রিয়কর্মী’ বলে পুলিশ ও দলীয়সূত্র নিশ্চিত করেছে। করোনার কারণে কলেজ ছাত্রাবাস বন্ধ থাকলেও এরা প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি কক্ষ দখল করে সেখানে বসবাস করছিল এবং নানা অপকর্ম করছিল। সন্ধ্যার পরে তারা মদ-জুয়ার আসর বসাত বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে তারা স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় জড়িতরা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রনজিত সরকারের অনুসারী। রনজিত অনুসারী জাহাঙ্গীর, নাজমুল প্রমুখ এই গ্রুপের নেতৃত্ব দেন।