প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা সেই প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশে পি কে হালদার যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সেজন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার পি কে হালদার দেশে ফিরতে হাইকোর্টে আবেদন করেন। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে তার পক্ষে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন এ আবেদন করেন। তবে দেশে ফিরে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের হেফাজতে যেতে চান তিনি। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে আবেদনে।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) পক্ষ থেকে হাইকোর্টে করা আবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি (পি কে হালদার) টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ওই ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার নামার কথা রয়েছে।
পি কে হালদারের জীবনের নিরাপত্তায় আদালতের হেফাজত চেয়ে আইএলএফএসএ’র আবেদনটি গ্রহণ করে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। আইএলএফএসএল’র আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।
আদেশে বিচারক বলেন, পি কে হালদার যদি দেশে আসেন, তাহলে এই কোম্পানি মেটারটা নিষ্পত্তি করা যাবে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য এই কোর্ট দেখতে চায় যে, তিনি বিমানযোগে দেশে পা ফেলা মাত্র তাকে যেন অ্যারেস্ট করা হয় এবং জেলে নেয়া হয়। তাকে যেন বাইরে যেতে না দেয়া হয়। এই কাজটা যদি করা হয়, তাহলে তার আবেদন অনুযায়ী তিনি যে মনে করছেন, তাকে কিডন্যাপ করা হবে, তা আর হবে না।
এর আগে ১৯ জানুয়ারি প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচার করার ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) ১৩ পরিচালকের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে পি কে হালদারের মা, স্ত্রী, ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া পি কে হালদারসহ এই ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং তাদের গত ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের ৭ আমানতকারীর করা এক আবেদনে এ আদেশ দেন হাইকোর্টের কোম্পানি আদালত। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএলের দুই পরিচালক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
এ অবস্থায় পি কে হালদার দেশ থেকে পালিয়ে যান। তিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে দেশে ফিরতে চান। এ বিষয়ে আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার কানাডা থেকে আইএলএফএসএলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আইএলএফএসএলকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়, আইএলএফএসএলের খেলাপি ঋণ আদায়ে সহযোগিতা করতে তিনি দেশে ফিরতে চান। তবে দেশে ফিরলে তাকে পুলিশি হেফাজতে না নিয়ে যেন আদালতের হেফাজতে নেয়া হয়- এমন নিরাপত্তা চান তিনি। তিনি জীবনের নিরাপত্তা চান। ওই চিঠিও আদালতে উপস্থাপন করেন আইএলএফএসএলের আইনজীবী। পরে আইনজীবীদের উপস্থিতিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
বহুল আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তা পাচার করেছেন। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএলএফএসএল থেকে ১৫৯৬ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। এর সঙ্গে পি কে হালদারের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।