একটি মোটর সাইকেল হাতিয়ে নিতে রেজাউল ইসলাম (১৬) নামে এক বন্ধুকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ডেকে নিয়ে তার গলায় রশি পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে লাশ গোপনের চেষ্টার দায়ে আদালত সুইট আলম (২৯), মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ (২৯) ও হাসান জামিল (৩২) নামে অপর ৩ সহকর্মীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিএম তারিকুল কবীর। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি এ দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
এছাড়া প্যানাল কোড ২০১ ধারায় প্রত্যেককে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০হাজার করে জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদন্ড এবং প্যানাল কোড ৩৮৫ ধারায় প্রত্যেককে দোষী সাব্যস্ত করে দশ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও ১০হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদন্ড এবং প্যানাল কোড ৩৭৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছর করে সশ্রম কারাদন্ড ও তিন হাজার করে জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাস করে কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
মৃত্যুদন্ড ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলো, সুইট আলম নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বারিল্যা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে, মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ দিনাজপুর জেলার চিবিরবন্দর থানার দক্ষিণ পলাশবাড়ি গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে এবং হাসান জামিল ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার ভানোর সরকারপাড়া গ্রামের বজির উদ্দীনের ছেলে। তবে আসামী হাসান জামিল ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম স্থানীয় টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজে লেখাপড়া করছিল। রেরজাউলের বন্ধু মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ ওর্য়াল্ডমিশন-২১ নামে একটি মাল্টিলেবেল কোম্পানীতে চাকুরি করত। একই সঙ্গে পলাশের সুবাদে দন্ডিত অন্যান্য আসামীদের সঙ্গে রেজাউলের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা সকলে মিলে দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে গিয়ে ওই কোম্পানীর নতুন অফিস খোলার কাজ করা কালে রেজাউলের বাজাজ মোটর সাইকেলের প্রতি অপর বন্ধুদের চোখ পড়ে। তারা ওই মোটর সাইকেলটি নিজেরা হাতিয়ে নিতে রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে এবং তাকে আসামী হাসান জামিলের বাড়ি এলাকায় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর এলাকায় নিয়ে আসে।
২০১৫ সালের ৪ মার্চ সন্ধ্যায় দন্ডিত আসামীরা সকলে মিলে রেজাউল ইসলামকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর কৈমারী গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পনা মতে তারা রেজাউল ইসলামের ঘাড় মটকে ও রশি দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হত্যা করে। পরে তার পড়নের কাপড় ও বাঁশঝাড়ের শুকনা ডালপাতা দিয়ে রেজাইলের মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে বিকৃত করে। এ ঘটনায় পত্রিকায় অজ্ঞাত ব্যক্তির আগুনে পোড়া লাশের ছবিসহ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হলে র্যাব-১৩ এর রহস্য উদঘাটন ও মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে এবং উপরে বর্ণিত তিনজনকে গ্রেফতার করে। সেসময় আসামীরা তাদের অপরাধ স্বীকার করে। এ ঘটনায় সেইসময় বালিয়াডাঙ্গী থানায় সরকার বাদী একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহার, আসামীদের স্বীকারোক্তি ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত উপরোক্ত রায় প্রদান করেন।
মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে সরকারি কৌসুলী এড.শেখর কুমার রায়, এড.আব্দুল হামিদ এবং আসামীপক্ষে এড. মোস্তাক আলম টুলু. এড.আবু মনসুর বাবুল ও ইউসুফ আলী মামলাটি পরিচালনা করেন।