muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আইন আদালত

বাগেরহাটে মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে সুপারের যাবজ্জীবন

বাগেরহাটের শরণখোলায় পঞ্চম শ্রেণির মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের দায়ে মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া বারোটায় বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

এই মামলায় বাদী পক্ষে ১৫ জন এবং আসামি পক্ষে দু’জন মিলিয়ে মোট ১৭জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন বিচারক।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর এই আদালত মাত্র সাত কর্মদিবসে জেলার মোংলা উপজেলার মাকড়ডোন এলাকার সাত বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের দায়ে আব্দুল মান্নান সরদার নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

এই ধর্ষণ মামলায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার (৪৮) একাই আসামি। তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর খোন্তাকাটা রাশিদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সুপার এবং একই উপজেলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের আব্দুল গফফার জোমাদ্দারের ছেলে।

মামলার বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের মতো পঞ্চম শ্রেণির চার ছাত্রী মাদ্রাসায় সুপারের কাছে আরবি শিক্ষা নিতে যায়।

পৌনে আটটার দিকে মাদ্রাসার সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার এক ছাত্রীকে রেখে অন্য তিনজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে তিনি ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এই ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ।

অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েটিকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনার এগারো দিন পর ১৯ আগস্ট মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াস জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেয়া হলে পিবিআই এর উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সাইয়েদ তদন্তে নামেন।

তিনি তদন্তে নেমে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে ঘটনার প্রায় দুই মাস পরে ওই বছরের ১৭ অক্টোবর জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে তিন দিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইয়েদ তদন্ত শেষে ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন।

এরপর আদালতের বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ চার্জ গঠন করে। মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।

বর্তমানে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে আদালতের বিচারক চিকিৎসক, পুলিশ, বাদী ও বিবাদী মিলিয়ে মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।

আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন বিচারক। বিচারক একই সঙ্গে তাকে কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

আসামি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী মো. আলী আকবর।

Tags: