দণ্ডবিধির ৪৫ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন সাজা মানে স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত কারাদণ্ড বলে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। ‘যাবজ্জীবন সাজা মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড’- এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার এই পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত বিচাপতির আপিল বেঞ্চ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও শিশির মনির।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে সাভারে জামান নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল। হাই কোর্টে আপিলের পর বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল থাকে।
এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন সর্বোচ্চ আদালত।
রায় ঘোষণার সময় আপিল বিভাগ ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস’ এমন মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তবে ওই দিন অন্যান্য মামলার আসামির ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে কি না সে বিষয়ে প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সবার ক্ষেত্রে এ রায় প্রযোজ্য হবে কিনা সেটি পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।
ওই দিন খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, রায়ের সময় প্রধান বিচারপতি বলেন- যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু (ন্যাচারাল লাইফ) কারাবাস। আমি প্রতিবাদ করে বলেছিলাম, দণ্ডবিধির ৫৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ ৩০ বছর। এছাড়া, যাবজ্জীবনের আসামিরা কারাগারে রেয়াত পেয়ে দণ্ড সাড়ে ২২ বছরে নেমে আসে। যদি আমৃত্যুই হয়ে থাকে, তা হলে তাদের রেয়াতের কি হবে? আমি আরও বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতির এ মন্তব্য যেন মূল রায়ে না থাকে। তবে যদি থাকে, তা হলে সব আসামির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে।
২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ মামলার ৯২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশিত হয়। পরে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আতাউর রহমান মৃধার আইনজীবী ওই রায়ের রিভিউর কথা সাংবাদিকদের জানান।