muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জের খবর

অপমানের শোধ নিতে বন্ধুকে খুন

প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর কিশোরগঞ্জের নিকলীর চাঞ্চল্যকর হেলাল (১৫) হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু (২১), শরীফুল ইসলাম (১৯) ও মাহাজুল ইসলাম (১৯) নামে তিন ঘাতককে গ্রেপ্তারের পর তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পিবিআই এবং আদালতের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে তারা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছে, তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু, শরীফুল ইসলাম, মাহাজুল এবং নিহত হেলাল চারজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল।

তাদের মধ্যে তাজুল ও হেলাল একসঙ্গে একটি হাঁসমুরগীর খামারে কাজ করায় দুজনের ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশি। খামারে তাজুলের অনুপস্থিতিতে তার পিতা মো. মমিন মিয়াকে অপমান করায় এর শোধ নিতে তাজু তার দুই বন্ধু শরীফুল ও মাহাজুলকে নিয়ে হেলালকে খুন করে।

পরে লুঙ্গি এবং শার্ট দিয়ে হাত-পা বেঁধে গুম করার জন্য লুঙ্গি এবং শার্টের ভেতরে ইট ও পাথরের টুকরা ঢুকিয়ে লাশ ফিসারীর পানির নিচে ডুবিয়ে দেয়। ২০১৫ সালের ১৯ জুন এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তিন দিন পর ২২ জুন লাশ ভেসে ওঠলে উদ্ধার করে পুলিশ।

মামলার ১২তম ও সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ পিবিআই এর পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান তিন ঘাতকের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া তিন ঘাতকের মধ্যে তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু নিকলী উপজেলার ইসলামপুর নাগারছিহাটির মো. মমিন মিয়ার ছেলে, শরীফুল ইসলাম একই গ্রামের মৃত মীর হোসেন ওরফে বিরাম আলীর ছেলে এবং মাহাজুল একই উপজেলার দামপাড়া গোয়ালহাটির মৃত নবী সরদারের ছেলে।

অন্যদিকে নিহত হেলাল নিকলী উপজেলার দামপাড়া পূর্বপাড়ার মো. জালাল মিয়ার ছেলে।

কিশোরগঞ্জ পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএম জানান, নিকলী দামপাড়ার ইসরাইলের হাঁসমুরগীর খামারে কাজ করতো হেলাল। তাজুলও একই খামারে কাজ করতো। একই হাঁসমুরগীর খামারে কাজ করার সুবাধে হেলালের সাথে তাজুলের সুসম্পর্ক ছিল।

২০১৫ সালের ১৯ জুন হেলাল হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার ৭/৮ দিন আগে তাজুলের অনুপস্থিতিতে তার দুই মাসের বকেয়া বেতন ১২ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য তার পিতা মো. মমিন মিয়া ইসরাইলের খামারে যান।

মো. মমিন মিয়া খামারে ইসরাইলকে না পেয়ে হেলাল মিয়ার কাছে বকেয়া বেতন দাবি করেন। হেলাল মালিকের কাছে টাকা চাওয়ার জন্য মমিন মিয়াকে বলে।

কিন্তু মমিন মিয়া তা না করে হেলালের কাছেই পাওনা টাকা চাইতে থাকলে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে হেলাল উত্তেজিত হয়ে তাজুলের পিতা মমিন মিয়াকে দুইটি চড়-থাপ্পর মারে।

মমিন মিয়া তার এই অপমানিত হওয়ার বিষয়টি ছেলে তাজুলকে জানালে তাজুল হেলালের এই অপমানের প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞা করে। প্রতিশোধের বিষয়টি তাজুল তার দুই বন্ধু শরীফুল ও মাহাজুলের সাথে আলোচনা করলে তিনজনে মিলে হেলালকে খুন করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বন্ধু হেলালকে নারীর প্রলোভনে ফেলে দামপাড়া খাদ্য গুদাম সংলগ্ন একটি ব্যক্তি মালিকাধীন পুকুরের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তিনজনে মিলে জাবড়ে ধরে পানিতে ফেলে চুবিয়ে হত্যা করে।

পরে হেলালের লুঙ্গি দিয়ে তার পা ও শার্ট দিয়ে হাত বেঁধে গুম করার জন্য লুঙ্গি এবং শার্টের ভেতরে ইট ও পাথরের টুকরা ঢুকিয়ে লাশ পুকুরের পানির নিচে ডুবিয়ে দেয়। তিনদিন পর ২২ জুন লাশ ভেসে ওঠলে পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে।

অজ্ঞাত লাশ হিসেবে উদ্ধার হওয়ায় ওইদিন গ্রাম পুলিশ মো. আমিন মিয়া বাদী হয়ে নিকলী থানায় মামলা (নং-১২) দায়ের করেন। পরবর্তীতে নিহত হেলালের পিতা জালাল মিয়া ও ভাই রবিন থানায় গিয়ে লাশে পরিধেয় কাপড় দেখে হেলাল এর লাশ বলে সনাক্ত করেন।

মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশের দুইজন ইন্সপেক্টরসহ পাঁচজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের একজন ইন্সপেক্টরসহ চারজন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করার পর সিআইডিতে ন্যাস্ত করা হয়। সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ১৮ই মার্চ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য দাখিল করেন।

এর প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জের জিআর আদালত নং-৪ এর বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করেন।

পিবিআই এ স্থানান্তরের পর মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার বদলির প্রেক্ষিতে গত ৫ই মার্চ পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। তিনি নিরবচ্ছিন্ন তদন্ত শেষে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সন্দিগ্ধ হিসেবে তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু, শরীফুল ইসলাম ও মাহাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেন।

গ্রেপ্তারের পর পিবিআই এর জেরার মুখে সত্য প্রকাশ করে তিন ঘাতক। জানায়, তাজুলের পিতার অপমানের শোধ নিতে তিনবন্ধু মিলে হেলালকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলে তারা।

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু, শরীফুল ইসলাম ও মাহাজুল ইসলামকে আদালতে পাঠানোর পর তিনজনই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিম আক্তার এর কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাদের কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

Tags: