মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ জনক, চল্লিশ বছর কেন শতবছরেও সহস্র বছরেও তুমি দেদীপ্যমান। তোমাকে ম্লান করার হাস্যকর অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো যারা, ধুসর মলিন আজ তারাই। তারা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতিপক্ষ। যারা বইয়ের পাতায় বঙ্গবন্ধুর অবয়বে কালিমা লেপন করার চেষ্টা করেছে, তাদের হাতের রংতুলি এখন নিজের মুখেই লেপ্টে দিয়েছে আলকাতরা রং।
অনেকের হয়তো মনে আছে, ড. এমাজ উদ্দীনের লেখা উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ের “পৌরনীতি কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান” বইয়ের কথা। বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে কী জঘন্যভাবে বঙ্গবন্ধু,তার সরকার,তার পরিবার সম্পর্কে এমাজ উদ্দীন লিখেছেন। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সরকারকে চরম নিষ্ঠুর স্বেচ্ছাচারী হিসেবে দেখিয়েছেন এই মেকী ভদ্রতার পোষাক পরিহিত ডিগ্রিধারী অপশিক্ষিত মানুষটি। তার মতো এমন আরো কিছু লোক যারা মূলত ‘৪৭ চেতনাধারী এবং সেই সময়ের চৈনিক বাম হিসেবে পরিচিত তারা মুক্তিযোদ্ধা জিয়াকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাজনীতির তাত্ত্বিক দার্শনিক ভিত্ তৈরি করেছিলেন।
একাত্তরের পরাজিত ধর্মান্ধ উগ্র সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানী দর্শন পুনরায় পরাজয়ের ভাগার থেকে উত্থিত হলো। ১০০০ বছরের বাংলা ও বাঙালির গৌরবগাঁথা ইতিহাসের মাইল ফলকগুলোকে গুঁড়িয়ে দিতে লাগলো। বাঙালি জাতিসত্ত্বা গড়ে ওঠার ক্রমধারাকে মুছে দিয়ে বাংলাদেশি জাতিয়তাবাদের নতুন তত্ত্ব হাজির করা হলো, প্রকারান্তরে যা সেই ‘৪৭ চেতনার মুসলিম জাতিয়তাবাদী তত্ত্বকেই সামনে নিয়ে আসা। এবার পাকিস্তান আমলের চেয়েও ভয়াবহরকম উগ্র ধর্মান্ধতা বিষাক্ত সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিতে লাগলো। এরা আওয়ামী লীগকে ও বঙ্গবন্ধুকে দাঁড় করিয়ে দিলো ইসলামের প্রতিপক্ষে। মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দুস্থানী ষড়যন্ত্রে পাকিস্তান ভাঙার গন্ডগোল হিসেবে মুসলিম জনগোষ্ঠির মনোজগতে প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হলো। ‘৭৫ থেকে ‘৯৬ পর্যন্ত ২১ বছরে স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকগুলো প্রজন্ম বেরিয়ে এসেছে যারা বিকৃত ইতিহাসের টেবলেট গলধকরণ করে, বিকৃত তত্ত্বকথার তাবিজ গলায় ধারণ করে বাংলাদেশের মৌলিক চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এমাজুদ্দিনীয় কিংবা মৌদুদী তত্ত্বের তাবিজ দিয়ে বেশী দিন,বেশী মানুষকে ভুলিয়ে রাখা যায় না।
বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের ইতিবাচক আলোকিত অধ্যায়ে মহানায়কের আসনে অধিষ্ঠিত। তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বি হয় না,সমকক্ষ হয় না। তার সহযোগী হয়,অনুগামী হয়,অনুসারী হয়। ব্যক্তি জনকের দেহকে খণ্ড করা যায় কিন্তু আদর্শের জনককে খণ্ডিত করা যায় না,ধ্বংস করা যায় না। জনককে স্বীকার করে,মেনে নিয়েই রাজনীতি করতে হবে,সে যে দলই হোক কিংবা ব্যক্তিই হোক।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/০১-০২-২০১৬ইং/ নিঝুম