পাকিস্তানকে আরেকবার হারানোর জন্য ষোলো বছরের অপেক্ষা ঘোচার পর সিরিজ নিশ্চিত করতে মোটেও সময় নেয়নি বাংলাদেশ। বোলারদের দারুণ বোলিংয়ের পর তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় শতক আর মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকে তিন দিনের মধ্যে পাকিস্তানকে দ্বিতীয়বার হারিয়েছে মাশরাফির দল।
রোববার পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো সিরিজ জিতল তারা। আগামী বুধবার হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ৩৮ ওভার ১ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিম ও সৌম্য সরকারের শুরুটা ছিল আত্মবিশ্বাসী। জুনায়েদ খানের করা তৃতীয় ওভারে পরপর তিনটি চার হাঁকিয়ে শুরুতেই অতিথিদের চাপে ফেলার চেষ্টা করেন সৌম্য।
সেই ওভারেই উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হয়ে বিদায় নেওয়ায় সৌম্যর চেষ্টাটি খুব একটা কাজে আসেনি। তবে তার দেখানো পথেই হাঁটেন অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম। তার দাপুটে ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ।
জুনায়েদ খান, রাহাত আলি, ওয়াহাব রিয়াজ আর সাইদ আজমলদের বলে দর্শনীয় সব কাভার ড্রাইভ, পুল, কাট আর ফ্লিকে বল সীমানা ছাড়া করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন তামিম।
ষষ্ঠ ওভারে রাহাত, নবম ওভারে আজমল ও পরের ওভারে ওয়াহাবের বলে তিনটি করে চার হাকান তামিম। ওয়াহাবের বলে শেষ চারটি তাকে পৌঁছে দেয় অর্ধশতকে। ৩১ বলে ১২টি চারের সাহায্যে অর্ধশতক করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি গড়েন তামিম। আজমলের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে ভাঙে ১১.২ ওভার স্থায়ী জুটি। বোলিং শুধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর এটাই আজমলের প্রথম উইকেট।
একশ’ রানে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর নিজেকে গুটিয়ে নেন তামিম। উইকেটে থিতু হতে সময় নেন মুশফিকুর রহিমও। তবে বাজে বলকে সীমানা ছাড়া করতে ছাড়েননি কেউই।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেন আজমল। তবে পাল্টা আক্রমণে স্লগ সুইপ করে তার বলে বিশাল ছক্কা হাকান মুশফিক। পরে রাহাতের বলে পরপর তিনটি চার হাকিয়ে চাপটা পুরোপুরি সরিয়ে নেন তিনি।
প্রথম ম্যাচে ১৭৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েছিলেন তামিম-মুশফিক। এবার ২২.১ ওভারে ১১৮ রানের আরেকটি চমৎকার জুটি উপহার দেন এই দুই জন।
ওয়াহাবের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে চার হাকিয়ে অর্ধশতকে পৌছান আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মুশফিক। প্রথম ১১ বলে কোনো রান নিতে পারেননি মুশফিক, এই সময়ে ফ্রি হিটও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
তবে থিতু হওয়ার দ্রুত রান তোলেন আগের ম্যাচে শতক করা মুশফিক। ৬৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে তিনি ফেরার সময় দল ছিল জয়ের দ্বারপ্রান্তে। তার ৭০ বলের ইনিংসটি গড়া ৮টি চার ও ১টি ছক্কায়।
তামিমের দ্বিতীয় অর্ধশতকটি আসে ৭৭ বলে। সব মিলিয়ে ১০৮ বলে নিজের ষষ্ঠ শতকে পৌঁছান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। জুনায়েদের বলে গ্লান্স করে নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যাওয়া তামিম অপরাজিত থাকেন ১১৬ রানে। তার ১১৬ বলের ইনিংসটি ১৭টি চার ও একটি ছক্কা সমৃদ্ধ। শাহরিয়ার নাফীস ও মাহমুদউল্লাহর পর বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই শতক করেন তামিম।
এক রান নিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া সাকিব আল হাসান অপরাজিত থাকেন ৭ রানে।
এর আগে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা অধিনায়ক মাশরাফি ও তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদকে শুরুতে দেখেশুনে খেলেন পাকিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে এসেই তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন রুবেল হোসেন।
পেসার রুবেলের বলে স্লিপে সরফরাজ আহমেদ সৌম্যর চমৎকার ক্যাচে পরিণত হলে ভাঙে ৩৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। নিজের প্রথম দুই ওভারে কোনো রান দেননি রুবেল।
রুবেলের পাঁচ বল কোনোমতে ঠেকিয়ে দেয়া মোহাম্মদ হাফিজ ফিরেন নবম ওভারেই। আরাফাত সানির বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারে সাফল্য পান সাকিবও। তার বলে রিভার্স সুইং করতে গিয়ে মুশফিকের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন পাকিস্তানের অধিনায়ক আজহার।
পরের ওভারেই আঘাত হানেন নাসির হোসেন। ফাওয়াদ আলমকে বোল্ড করেন এই অফস্পিনার। এরপর সাকিব মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললে ভীষণ বিপদে পড়ে অতিথিরা।
বিনা উইকেটে ৩৬ থেকে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারানো পাকিস্তান প্রতিরোধ গড়ে হারিস সোহেল ও সাদ নাসিমের ব্যাটে। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে হারিসকে বিদায় তাদের ১৭.৩ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন মাশরাফি।
৩৪ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ১১১/৫। ৩৫তম ওভার থেকে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগী হয় তারা। মাশরাফির করা সেই ওভারে পরপর দুটি চার হাকিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে অতিথিরা।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে হারিসের উইকেট হারিয়ে ৪৪ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিদায়ের কোনো ছাপ পাকিস্তানের ইনিংসে পড়তে দেননি নাসিম ও ওয়াহাব। সপ্তম উইকেটে ১১ ওভারে ৮৫ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে।
৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন নাসিম। তার ৯৬ বলের ইনিংসটি সাজানো ৬টি চার ও ১টি ছক্কায়। ৫১ রান করা ওয়াহাবের ৪০ বলের ইনিংসটি ৫টি চার ও ২টি ছক্কা সমৃদ্ধ। নাসিম, হারিস ও ওয়াহাবের দাপটে শেষ ১৬ ওভারে ১২৮ রান যোগ করে পাকিস্তান।
৫১ রানে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার সাকিব। দুই ওভার মেডেন নেয়া রুবেল ৭ ওভার বল করে ২৭ দিয়ে নেন এক উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৩৯/৬ (আজহার ৩৬, সরফরাজ ৭, হাফিজ ০, হারিস ৪৪, ফাওয়াদ ০, রিজওয়ান ১৩, নাসিম ৭৭*, ওয়াহাব ৫১*; সাকিব ২/৫১, নাসির ১/১৭, রুবেল ২/২৭, আরাফাত ১/৪১, মাশরাফি ১/৫২)
বাংলাদেশ: ৩৮.১ ওভারে ২৪০/৩ (তামিম ১১৬*, সৌম্য ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, মুশফিক ৬৫, সাকিব ৭*; আজমল ১/৪৯, রাহাত ১/৫৭, জুনায়েদ ১/৬১)
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ/ এম ইউ