পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে কি হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
তিনি আজ সংসদে সরকারি দলের সদস্য আব্দুল মান্নানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সম্পর্কের টানাপোড়েন কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই বলে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এমন কোন কথা নেই। যুদ্ধের সময়ও সম্পর্ক টিকে থাকে। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। তবে আপাতত কিছু করছি না। ভবিষ্যতে কি হবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।’
তিনি বলেন, কোন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের উপর নির্ভর করে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আমরা বৈদেশিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। গতকালের ঘটনার বিষয়ে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল।
সরকারি দলের সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম ও রায় কার্যকরের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় পাকিস্তান অনাকাঙ্খিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ও অযাচিত বিবৃতি বা মন্তব্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল, যা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, পাকিস্তানের এ ধরনের কর্মকান্ডে প্রতিবারই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পাকিস্তান হাইকমিশনারকে বিভিন্ন সময় এজন্য তলবও করা হয়েছে। অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা আমাদের পররাষ্ট্র নীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। অন্যসব রাষ্ট্রের কাছ থেকেও একই আচারণ প্রত্যাশা করি। কিন্তু, পাকিস্তান বরাবর হতাশ করেছে। এ বিষয়ে সব কূটনৈতিক ফ্রন্টে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়। ভবিষ্যতে, পাকিস্তানি মহল বা কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং এ ধরনের অনাকাঙ্খিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।
সরকারি দলের সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মতো একটি সার্বভৌম দেশের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তানের করা মন্তব্য সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।
তিনি বলেন, পাকিস্তান বিভিন্ন বিবৃতিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ক্রটিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছে। এমনকি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত এর মধ্যকার স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অপব্যাখ্যা করেও বিবৃতি দিয়েছে। ত্রিদেশীয় চুক্তিতে বাংলাদেশে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যাবে না- এমন কোন কিছুর উল্লেখ নেই, বরং পাকিস্তানই ১৯৭১ সালে গণহত্যার জন্য চিহ্নিত ও আটককৃত নিজ দেশের নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনার বাধ্যবাধকতা অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছে।