দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা (আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা) আত্মসাতের অভিযোগে খনির সাবেক ছয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ জনকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে তাদের জামিনের আদেশ সাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন।
সুপার বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় তাদের জামিনের জন্য আদেশ পেয়েছিলাম এবং আজ (বৃহস্পতিবার) সকালেই তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
সাবেক ছয় এমডি হলেন আবদুল আজিজ খান, খুরশীদুল হাসান, কামরুজ্জামান, আমিনুজ্জামান, এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও হাবিব উদ্দিন আহমেদ।
জানা যায়, বুধবার দুপুরে চার্জ গঠনের দিন ওই আসামিরা দিনাজপুর স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদের জামিন সংক্রান্ত একটি রিট উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবী নুরুজ্জামান জাহানী সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। পরে বিকেলে এক আদেশে তাদেরকে জামিন দেন একই আদালত।
সেই জামিন আদেশের কপি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরে সেই আদেশ কারাগারে পৌঁছানোয় বুধবার তাদের জামিনে মুক্তি দেয়নি কারাগার কর্তৃপক্ষ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। এর আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় এবং কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করেন।
গত ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই সাবেক সাত ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত (মেয়াদে) ঘাটতিকৃত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত। আসামিরা দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এই অভিযোগপত্রে এজাহারনামীয় ছাড়াও ৯ জনকে যুক্ত করা হয় এবং তদন্তে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ৫ জনকে আসামি থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়। আদালতে ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হলেও তাদের মধ্যে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুবুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন।