muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

নৈতিক অবক্ষয় রোধে পাঠ্যক্রমে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই

সমাজের প্রায় সকল স্তরে (Except few exceptions) মুল্যবোধ ও নৈতিকতার অবক্ষয় বিদ্যমান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ নয় বরং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের graduate রা-ই এর সাথে জড়িত। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় ও নৈতিক ভিত্তি খুবই দুর্বল। অথচ নৈতিকতা ও মুল্যবোধের মূল উৎসই হলো ধর্ম এবং বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য ইসলাম। মালয়েশিয়া সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের Multicultural society তে ধর্ম তথা ইসলাম শিক্ষাকে শিক্ষার সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক রেখে পাঠ্যক্রম প্রণীত হয়েছে, এতে তাঁদের উন্নতির কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। বাংলাদেশে কেন এর ব্যতিক্রম? এদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থার বিভিন্ন স্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার অবস্থান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনা জরুরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ও মুল্যবোধ রক্ষ্যায় বদ্ধপরিকর- যিনি মদীনা সনদের ভিত্তিতে দেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তাই এই ব্যাপারে তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ ও আশু হস্তক্ষেপ জরুরী।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংকট্যাঙ্ক- ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (আইআইআইটি) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) এর যৌথ আয়োজনে গতকাল  (সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১) ঢাকায় অনুষ্ঠিত  “আইআইআইটি- বিআইআইটি ইন্টেলেক্সুয়াল ডিসকোর্স সিরিজের” এ পর্বে “জাতীয় শিক্ষাক্রমে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (Webinar) এ অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের নিয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইটির নির্বাহী পরিচালক ডঃ এম আব্দুল আজিজ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডক্টর শাহ মুহাম্মাদ আবদুর রাহীম, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া অতিথী হিসেবে ছিলেন প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ সোলায়মান,ডীন ধর্মতত্ত্ব অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, প্রফেসর ড.আ. ক. ম. আব্দুল কাদের, অধ্যাপক, আরবী বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ডঃ এ কে এম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ ফরিদগঞ্জ মাজিদিয়া কামিল মাদরাসার ও যুগ্ন মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।

সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যাবস্থার বিভিন্ন স্তরে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে নিম্নোক্ত পর্যবেক্ষন ও সুপারিশমালা গ্রহন করা হয়-

১। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০’  এ ধর্ম শিক্ষাকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠনে  এবং বিদ্যালয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের কথা উল্লেখ আছে (পৃ: ৯৭) ; কিন্তু পাবলিক (বোর্ড) পরীক্ষায় ‘ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষা’ বিষয়টি রাখা হয়নি। পাবলিক (বোর্ড) পরীক্ষায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রাখা না হলে- আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে তা অর্থহীন হয়ে পড়বে। শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পড়তে চাইবে না। তাই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের হৃদয়ের অনুভূতি আকাঙ্খা বিবেচনায় নিয়ে পূর্বেব ন্যায় ‘ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষা’ বিষয়টি বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী।

২। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০ -এ মাধ্যমিক স্তরে বলা হয়েছে। শিক্ষানীতি -২০১০ অনুযায়ী এ স্তরে নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার কথা। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২০ -এ “মূল্যবোধ ও নৈতিকতা” বিষয়ে একটি নতুন শিখন-ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একাদশ -দ্বাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান,ব্যবসায় ও মানবিকসহ সকল শাখা ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক-নৈর্বাচনিক বিষয় হিসেবে পঠন-পাঠন  এবং বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা দরকার।

৩। প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত- মানব জীবনের ভিত্তিভূমি হলো শিশুকাল। এখানে যা কিছু শেখানো হবে, তাই আজীবন তাদের কোমল হৃদয় রেখাপাত করবে। তাই ‘শিশুর প্রথম পাঠ, প্রথম পড়া হতে হবে পরম প্রভু স্রষ্টার নামে- যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ এটা শিশুর জন্মগত অধিকার। শিশুর ধর্মীয়জ্ঞান মসজিদ, মন্দির, গির্জা প্যাগোডা- তথা উপাসনালয়ের মধ্যে সীমিত না রেখে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত গুরুত্বসহ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা   দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। এটা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্বও বটে। কেননা, জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে- ‘প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব বেসরকারি বা এনজিও খাতে হস্তান্তর করা যাবে না” (প্রাগুক্ত- ৪)। কাজেই শিশুর ধর্মশিক্ষা মূল শিক্ষার বাইরে দেয়া শিক্ষানীতি-২০১০ এর পরিপন্থী ।

৪। উচ্চশিক্ষার সকল শাখা-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ব্যবসায় প্রশাসন, কলা, কারিগরি, মেডিকেলসহ সকল প্রোগ্রাম, শাখা, বিভাগ, ডিসিপ্লিনে ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ ও ‘বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাস’ বিষয়ের মতই ‘ইসলাম ও নৈতিকশিক্ষা’ / অন্যন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য  ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা’ নামক একটি বিষয় আবশ্যিক হিসেবে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে দিন। এজন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পদ সৃষ্টি করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করা দরকার।

৫। শিক্ষার সকল পরিমণ্ডলে আদর্শ জীবন হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের জীবনাদর্শ এবং অন্যন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য মহামানবদের জীবনাদর্শ পঠন-পাঠন বাধ্যতামূলক করা দরকার।

সম্মেলনে পেনেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জনাব ফজলে রাব্বী, সহকারি অধ্যাপক (ইসলাম শিক্ষা), রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা, মিসেস ফরিদা ইয়াসমিন, সিনিয়র শিক্ষিকা (ইসলাম শিক্ষা), শহীদ বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট আনোয়ার গার্লস কলেজ, ঢাকা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বিআইআইটির কোঅর্ডিনেটর ডঃ ইবরাহী খলিল আনোয়ারী। উক্ত অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইসলামী শিক্ষা বিভাগের গবেষক, শিক্ষকসহ প্রায় দুই শত লোক অংশ গ্রহণ করেন। পরিশেষে শ্রোতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রানবন্ত প্রশ্নোত্তর ও উম্মুক্ত আলোচনা। সভাপতি মহোদয়ের সমাপনি বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়।

Tags: