ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব মো. সামসুল আলম মঙ্গলবার ডাকযোগে ও ‘বিশেষ বাহকের’ মাধ্যমে এ চিঠি পাঠান।
এতে বলা হয়, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিটি এলাকার জন্যে
এক ব্যাটালিয়ন করে মোট তিন ব্যাটালিয়ন সেনাসদস্যকে ২৬ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোতায়েনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বিকালে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, “জনমনে যেন কোনো ভীতি না থাকে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে, সুন্দরভাবে, নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে সে জন্য আমরা সেনাবাহিনীকেও এ নির্বাচনে ব্যবহার করব।”
সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে পাঠানো চিঠিতে কমিশন বলেছে, “নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মূলত ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স ও রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলে তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।”
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩০ ও ১৩১ ধারা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ‘ইন্সট্রাকশনস রিগার্ডিং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’- এর সপ্তম ও দশম অনুচ্ছেদের ক্ষমতা ও নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের সময় সশস্ত্রবাহিনী পরিচালিত হবে।
মোতায়েন করা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের কাজ হবে নির্বাচনী কাজে ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় বেসামরিক প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করা। প্রতিটি ব্যাটালিয়নে নির্ধারিত সংখ্যক নির্বাহী হাকিম থাকবেন বলে জানানো হয় চিঠিতে।
গত রোববার কমিশনের বৈঠকে ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
‘প্রয়োজন ছিল না, তবু দিলাম’
ইসির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু’, দেশের পরিস্থিতিও ‘ভালো’।
“পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য রয়েছে ভোটের জন্য। আমরা যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি লোকবল দেওয়ার কথাও বলেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা।”
সিইসি বলেন, গত ছয়টি সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী ডাকা হয়নি। পরিস্থিতি এখন ‘তেমনই’।
তারপরও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে কাজী রকিব বলেন, “তিন সিটিতেও সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল না। তবুও অতি সম্প্রতি যেসব ঘটনা [হরতাল, অবরোধ, সহিংসতা] হয়েছে তাতে আতঙ্কিত সময় পার করেছে জনগণ। তারা দ্বিধায় রয়েছে। ভোটারদের মনে মানসিক স্বস্তির জন্য সেনা সহায়তার জন্য বলেছি।”
সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আশা রেখে তিনি বলেন, “গত সিটি নির্বাচনের মতো এবারও একইভাবে সুন্দর নির্বাচন হবে।”
‘প্রয়োজনের তুলনায় কম’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভোটারদের কথা চিন্তা করে সেনা মোতায়েনের এ সিদ্ধান্ত ‘ইতিবাচক’। তবে তিন নগরীর বিবেচনায় তিন ব্যাটালিয়ন সেনা ‘কম’।
অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি ব্যাটালিয়নে তিনশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ পর্যন্ত সেনাসদস্য থাকে। সে হিসাবে তিন সিটির জন্য নিয়োজিত থাকবে বারোশর মতো সদস্য।
“এটা অনেক কম। তারা রিজার্ভে থাকবে, কখন রিটার্নিং অফিসার ডাকবে, কোন এলাকায় কীভাবে থাকবে, সব বিষয়ই আসলে ভোটের সময় দেখা যাবে।”
নির্বাচনী আইনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনীকে বাদ দেওয়ার পর অনেক বিষয় বদলে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৬৫ হাজারের মতো সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ইসির নির্দেশনা মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী তাদের মোতায়েন করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ/ এম ইউ