muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আইন আদালত

পিকে হালদারকে পালাতে সহায়তাকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

দেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ জালিয়াত পিকে হালদারকে (প্রশান্ত কুমার হালদার) পালাতে সহায়তাকারী ইমিগ্রেশন, পুলিশ ও দুদকের কর্মকর্তাদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মামলায় আসামিদের জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তালিকা জমা দিতে আগামী ১৫ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি পিকে হালদারের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থ কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কর্মরত সেসব কর্মকর্তার নাম, পরিচয়সহ ওই তালিকা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। তবে তাদের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তালিকা দাখিলে আগামী ১৫ মার্চ দিন নির্ধারণ করলেন।

প্রসঙ্গত প্রায় দেড়শ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মামলা তদন্তে রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আর্থিক খাত থেকে আত্মীয়স্বজন চক্রের মাধ্যমে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার কারিগর পিকে হালদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অফিসিয়াল তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। দুদক ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে।

এ ছাড়া দুদকের ক্যাসিনো দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট তালিকায় লিজিং কোম্পানি ও আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারে জড়িত পিকে হালদারের নামও রয়েছে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতায় তার বিরুদ্ধে গত ৮ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে গত বছরের শুরুতে খবর আসে। এর পর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

বর্তমানে তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। তবে পিকে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পরই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ এনে মামলা করে।

দুদকের এ মামলার মুখে নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৯ অক্টোবর হাইকোর্টে আবেদন করে আইএলএফএসএল জানায়, আত্মসাৎ করা অর্থফেরত দিতে জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে পিকে হালদার দেশে ফিরতে চাইছেন। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)।

এ আবেদন গ্রহণ করে ২১ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।  আদেশে আদালত বলেন, পিকে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।  তিনি যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সে জন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেন আদালত।

কিন্তু ২৪ অক্টোবর জানা গেল পিকে হালদার দেশে ফিরছেন না। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই-মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলেরে কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে পিকে হালদারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তার আইনজীবীরা।

পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তায় আবেদন করে দুদক। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে করা সব মামলার নথি চায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।

এর পর গত ২ ডিসেম্বর পিকে হালদারকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের জন্য পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত।

পরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, পিকে হালদারকে গ্রেফতারে রেডঅ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।

Tags: