muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

মাহবুব কবীর মিলনকে লঘুদণ্ড

১০ জন সৎ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি উইং তৈরি করে মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশের সব দুর্নীতি দূর করা সম্ভব বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর মিলন। বলেছিলেন, এর অন্যথা হলে তিনি যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত থাকবেন। কিন্তু তার সেই চ্যালেঞ্জ আমলেই আনা হয়নি। উল্টো এমন চ্যালেঞ্জ জানানোর এক সপ্তাহ ব্যবধানে তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। অসদাচরণের অভিযোগে করা হয় বিভাগীয় মামলা। সর্বশেষ গত ১ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনে তাকে ‘তিরস্কার নামীয় লঘুদণ্ড’ দিয়েছে সরকার। সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ও প্রকৃত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র ব্যতীত তার মনগড়া, ভিত্তিহীন ও সরকারের জন্য অস্বস্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে এ বক্তব্য আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। তিনি সরকারের অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তা বিধায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয়াদি বিবেচনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি অনুযায়ী তাকে তিরস্কার নামীয় লঘুদণ্ড দেওয়া হলো।

সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তার এহেন শাস্তি নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন অন্য সব কর্মকর্তা। তারা মনে করছেন, মাহবুব কবীরের মতো দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তার শাস্তিতে অন্যান্য সৎ কর্মকর্তার মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়বে; তারা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পুরো প্রশাসনের জন্যই ভয়ানক হবে বলে তাদের আশঙ্কা।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, মাহবুব কবীরের শাস্তি হওয়ায় মেধাবী ও সৃষ্টিশীল কর্মকর্তারা ভালো কোনো আইডিয়া নিয়ে এগিয়ে আসতে সাহস পাবেন না। শাস্তি দেওয়ার আগে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন ছিল সংশ্লিষ্টদের।

মাহবুব কবীর মিলনকে দেওয়া ‘লঘুদ-’ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুনকে ফোন করা হয়। কিন্তু ও প্রান্ত থেকে সাড়া মেলেনি।

কী বলেছিলেন মাহবুব কবীর মিলন?

গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর বলেছিলেন, ‘আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তবে হতাশা হচ্ছে ওই জায়গায়, আমরা পারা জিনিস অনেক সময় করি না। পারা জিনিসও অনেক সময় পারব না মনে করে বসে থাকি। আমি যদি প্রধানমন্ত্রীকে পেতাম তবে বলতাম, স্যার আমাকে ১০ জন অফিসার দিন। এদের আমি চুজ (নির্বাচন) করব, এদের নিয়ে আমি একটা উইং করব। মানুষের চোখের পানি দূর করার জন্য সব মন্ত্রণালয়, সব দপ্তর, সব অধিদপ্তরের বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করব আমরা এই ১০ জন। বলেন, ‘কেউ যদি বলে আমরা দুর্নীতি দূর করতে পারব না, কেউ যদি বলে সিন্ডিকেট ভাঙা যায় না, আমি ওটারই চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমার তিন মাস সময়ই যথেষ্ট। যে কোনো ডিপার্টমেন্টের সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য। এনাফ টাইম (পর্যাপ্ত সময়)। দেশের অনেক ডেভেলপমেন্ট আনা যাবে, অনেক পরিবর্তন আনা যাবে। পারা যায়, আমরা পারবই। করতে না পারলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। এটা আমার খুব ইচ্ছা।’

মাহবুব কবীর আরও বলেছিলেন, তবে আমাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। জবাবদিহিতা থাকবে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে। অন্য কারও কাছে নয়। কেন এই কথাটা বলছি- নানা পারিপার্শ্বিকতা আমাদের কাজ করতে দেয় না। নানা কারণে করতে দেওয়া হয় না। সেখানে আর্থিক কিংবা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।

Tags: