মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- পচা গম কেনায় শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ খাবার অনুপযোগী গম আমদানি করায় দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
এছাড়াও গম আমদানি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে এসব সুপারিশ ও পরামর্শ দেয়া হয়। কমিটির কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সংসদীয় কমিটির দাবি, নিয়ম না মেনে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে আগেই ৯০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা গেচে।
তাদের মতে, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং অনিয়মের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও বলা হয়েছে।
কমিটির বৈঠকে কার্যবিরণী থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত দরপত্রের মাধ্যমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইমপেক্স কনসালটেন্ট লিমিটেড ফ্রান্স থেকে ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম আমদানি করে।
ওই গম নিয়ে এমভি ট্রান্স স্প্রিং নামের একটি জাহাজ ১০ মে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখানে ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম খালাস করা হয়।
বাকি গম খালাস করতে জাহাজটি মংলা বন্দরে যায়। সেখানে গম খালাসে তদারকি কমিটি গুণগত মান পরীক্ষা করে খাবার অনুপযোগী বলে প্রমাণ পায়। ফলে ওই গম খালাস বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এর আগেই ওই গমের ৯০ শতাংশ মূল্য পরিশোধ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়া গম দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। সে সব স্থানেও এই গম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে মংলা বন্দর থেকে পাওয়া প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনএসআই তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়।
এনএসআই’র প্রতিবেদেন ওই আমদানিতে সরকারের প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, গুণগত মান যাচাই করার পর আমদানিকৃত গমের টাকা পরিশোধের নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এতে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে।
এজন্য ইমপেক্স গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. সহিদ জাহাঙ্গীর ও নিম্নমানের গম সরবরাহে সহযোগিতাকারী সাবেক মহাপরিচালক মো. সারোয়ার খান, বর্তমান মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদ, পরিচালক (সংগ্রহ) এলাহী দাদ খানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া দুদকের মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এনএসআই’র সুপারিশের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে গম আমদানি নিয়ে একের পর এক কেলেংকারির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি স্বীকার করে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, তারা অনেক আগেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক অনৈতিক মনোভাবপন্ন হওয়ায় তিনি যেকোনো প্রকারের অনৈতিক চাপে অনিয়ম করে থাকেন মর্মে প্রতীয়মান। বিশেষ করে তিনি খাদ্য অধিদফতরের দুর্নীতি সমৃদ্ধ সিন্ডিকেটের সকল নির্দেশ নির্দ্বিধায় পালন করেন।
এতে আরো বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদফতর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ইমপেক্স গ্রুপের মাধ্যমে আমদানি করা গম ছাড়াও চারটি প্যাকেজে গম আমদানি করে। ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই চার প্যাকেজের মাধ্যমে ২ লাখ ৫ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন গম নিম্নমানের হওয়ায় সারাদেশে আলোড়ন তৈরি হয়। এর ফলে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।
তবে এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদে বলেন, সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তারা চট্টগ্রাম সফর করে এসেছেন। এখন তারা খুলনা যাবেন। পরে তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেবেন। এর পরপরই মন্ত্রণালয় সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/13-02-2016/মইনুল হোসেন