আদালতের ‘সময় নষ্ট করায়’ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দকে জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। মামলা করার পর শুনানি না করে এবং আদেশের সময় হাজির না থাকায় আজ বুধবার তাকে এ জরিমানা করা হয়। তার অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক প্রশ্ন করেছেন, গণমাধ্যমকে দেখানোর জন্যই তিনি মামলা করেন কি না।
অবমাননার দায়ে এর আগে সর্বোচ্চ আদালত থেকে শাস্তি পাওয়া ইউনুছ আলী আকন্দ গত মাসের শেষ দিকে মহামারি সামাল দিতে সরকারের বিধিনিষেধ জারির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে এই রিট মামলা করেছিলেন। কিন্তু এরপর তার আর পাত্তা না থাকায় আজ বুধবার ওই রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে ‘খরচ বাবাদ’ আদালত ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে এই আইনজীবীকে।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল দায়ের করা ওই রিট মামলায় ইউনুছ আলী আকন্দ দাবি করেন, জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া লকডাউন দেওয়ার সুযোগ নেই। চলমান লকডাউনের ওপর স্থগিতাদেশ এবং আর যাতে লকডাউন দেওয়া না হয়, সে জন্য নির্দেশনা চেয়েছিলেন তিনি। ওই রিট আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটিকে বিবাদী করা হয়েছিল তার।
সেখানে তিনি যুক্তি দেখান, ‘জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া জনগণের চলাফেরার অধিকার, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার সরকার স্থগিত রাখতে পারে না। এটা সংবিধান পরিপন্থি। কিন্তু সরকার জরুরি অবস্থা জারি না করেই লকডাউন দিয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৫ ও ৩৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।’
গত ২৭ এপ্রিল রিট আবেদনটি উপস্থাপন করলে তা কার্যতালিকায় ওঠে। গত রোববার আদালত কার্যতালিকার ক্রমানুসারে ইউনুছ আলী আকন্দকে ডাকে। সেদিনও তিনি ছিলেন না। তখন আদালত মামলাটির শুনানি না করে গতকাল মঙ্গলবার আদেশের জন্য রাখে। কিন্তু মঙ্গলবারও কার্যতালিকা ধরে ডেকে ইউনুছ আলী আকন্দকে পায়নি আদালত। আজ বুধবার কার্যতালিকার প্রথমেই এ রিট মামলাটি ছিল।
এদিনও কার্যতালিকা ধরে কয়েকবার ডেকে রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দের সাড়া পাচ্ছিল না আদালত। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খানের কাছে পরামর্শ চান যে, শুনানি বা আদেশের সময় আদালতে আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় মামলা খারিজের সাথে খরচ বাবদ জরিমানা করা যায় কিনা।
জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার এবং আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘জনস্বার্থের মামলায় এ রকম হলে খরচ বাবদ জরিমানা করা যায়।’ বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম তখন বলেন, ‘এই আবেদন (লকডাউন চ্যালেঞ্জ করা রিট) দিয়ে চার দিন পাঁচ দিন (তিনি) নাই। লকডাউন চ্যালেঞ্জ করে মাঝে মাঝে উঁকি দেন, আর মামলা ধরলে থাকেন না। প্রতিদিনই এ কাজ করেন। ঠিক আছে, ডিসমিস ফর ডিফল্ট কস্ট অব টাকা টেন থাউসেন্ড।’
ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থিত একজন আইনজীবী তখন বলেন, ‘তাকে (ইউনুছ আলী আকন্দকে) সিরিয়াসলি সতর্ক করা উচিৎ। আপিল বিভাগ থেকেও তাকে একবার সতর্ক করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘আমি তো লাইন টাইন পাই নাই জুমে। এখন মিডিয়ার মাধ্যমেই শুনলাম যে ১০ হাজার টাকা ফাইন ফর ডিফল্ট। এখন আমার কথা হইল, আমি যে মোশনটা ফাইল করেছিলাম সেটা প্রথম এবং দ্বিতীয় লকডাউন চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু এই মামলার শুনানি হতে হতে আরও দুবার লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। সেগুলো আমি চ্যালেঞ্জ করি নাই। ফলে এই রিটটা এমনিতেই অকার্যকর হয়ে গেছে।’
আর শাস্তির বিষয়ে ইউনুছ বলেন, ‘মোশন মামলা ডিফল্ট ফর ডিসমিস (আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় খারিজ) হতে পারে। কিন্তু কস্ট (খরচ বাবদ জরিমানা) দেওয়ার কোনো বিধান নাই। এরকম কোনো নজির নাই।’
হাইকোর্ট রুলস অনুযায়ী এ আদেশটি প্রত্যাহার (রিকল) চেয়ে এই বেঞ্চেই আবেদন করবেন বলে জানান আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। আর যদি তাতে ব্যর্থ হন, তাহলে আদেশটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।