দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হতে পারে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হলে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারক।
এদিকে, সহকর্মী রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে আসেন দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্তে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি এ বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক। আদালত প্রাঙ্গণে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার কান্নার এ দৃশ্য প্রকাশ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আইন ও আদালতের উপর শ্রদ্ধাশীল। সবসময় আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার আস্থা রাখি। এখন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে। এটা আইনের বিষয় নাকি, একই দিনে হয়। ফলে আমরা একদিন পরেই আমরা এ বিষয়ে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আমরা এখনো আশাবাদী।’
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হবে কিনা জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘আগে আমরা জামিনের জন্য আবেদন করে জামিনটা পাই। জামিন পাওয়া পর মামলা যদি করতে হয়, সেটা পরে করতে হবে। এখন করা যাবে না। কিন্তু আইনের বাইরে একজন নাগরিক হিসেবে, একজন সাংবাদিক, একজন লেখক, একজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক হিসেবে আমি বলতে চাই এই যে রিমান্ডের আবেদনটা কেন করলো এটা তো নাও করতে পারতো। তাহলে তো আজ আমরা জামিন নিয়েই কথা বলতে পারতাম। আমার মনে হয় আমাদের স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে দেশের সব সাংবাদিক সমাজকে এক হতে হবে।’
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক বলেন, ‘আপনার সবাই মিলে আওয়াজ তোলেন, এই মামলা আজকেই প্রত্যাহার করা হউক। ২০০ বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, একটা দেশের সংবাদপত্র থাকবে সরকার থাকবে না, একটা দেশে সরকার থাকবে সংবাদপত্র থাকবে না। এটার মধ্যে আমি সরকার থাকবে না সংবাদপত্র থাকবে সেটা চাই। আমরা সরকারের সহযোগী। আমরা যদি দুর্নীতির সংবাদ না তুলে ধরি, তাহলে সরকার কীভাবে বুঝবে যে দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। কাজেই আমরা সরকারের উপকার করার চেষ্টা করছি এবং রোজিনা ইসলাম তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।’
কিশোর আলোর সম্পাদক আরও বলেন, ‘আজকে আমি এজাহারে শুনলাম, তিনি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারেন! একজন সাংবাদিক, নারী, মা, অসুস্থ নারী যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেন তাকে কী দেশের মান উজ্জ্বল হলো? কাজেই ভাবমূর্তি কারা ক্ষুণ্ন করছে? আমি সরকার ও সরকারের উচ্চমহলকে বলবো, আমরা যদি দেশের বা সরকারের ভাবমূর্তি আসলেই উজ্জ্বল করতে চাই তাহলে এই মামলা নিঃশর্তভাবে এখনই প্রত্যাহার করে নেওয়া হউক। আর আইনের যে লড়াই এটা আমরা করে যাবো।’
একজন লেখক হিসেবে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন ভোটার হিসেবে বলছি সাংবাদিকতাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, তথ্যে অবাধ প্রবাহ, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে তথ্য জানার। সেই অধিকার কায়েম করার জন্য সাংবাদিকদের উপর যদি জুলুম করা হয়; এটা সাংবাদিকতার জন্য ভালো না, এটা দেশ, সুশাসন ও সরকারের জন্য ভালো না। আমার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বইগুলোতে বারবার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলে গেছেন। আমার মহান নেতা যে নিজেও একজন সাংবাদিক ছিলেন, এই নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন তা পড়ে আমাদের মাথা উচু হয়েছে। সেই সাংবাদিকের উপর যে নির্যাতন, মামলা হয়েছে, ৬-৭ ঘণ্টা তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তা হেনস্থা ছাড়া আর কিছুই না। আইনের বাইরে নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।’