বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। রাত তিনটায় ক্লাস নিয়ে গত বুধবার থেকে নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি। এ ঘটনার পর তার পুরোনো একটি নাচের ভিডিও ফের ভাইরাল হয়েছে। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবার প্রস্তাব পেলে চলচ্চিত্রে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতেও রাজি আছেন বলে জানালেন তিনি।
চলচ্চিত্রের যে দৃশ্যটি ভাইরাল হয়েছে তাতে দেখা যায়, পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার চরিত্রে আছেন ড. কলিমউল্লাহ। এদিকে, একজন ভিসি হিসেবে সিনেমায় অভিনয় করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে চলচ্চিত্রে অভিনয় করাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তিনি।
কলিমউল্লাহ বলেন, ‘ফেসবুকে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সেই সিনেমায় আমি প্রথম অভিনয় করি। ব্যাপক ব্যবসা সফল সিনেমা ‘শ্যুটার’, যেটি একসঙ্গে দেশব্যাপী ১৪৮ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। শ্যুটার সিনেমায় আমি মূলত ঢাকার পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে অভিনয় করি।’
কোনো চলচ্চিত্রে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে চান কিনা- প্রশ্নের জবাবে কলিমউল্লাহ বলেন, ‘কোনো পরিচালক যদি এমন প্রস্তাব দেন, তাহলে সানন্দে গ্রহণ করব।’
নিজের অভিনয় জীবনের ইতিহাস টেনে কলিমউল্লাহ জানান, তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল সংলগ্ন ওয়াইজঘাটে)। সেখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। সেখানে পড়তে গিয়ে তিনি অভিনয়সহ নাচ-গানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পারিবারিক অনুপ্রেরণাও তার সঙ্গী ছিল।
উল্লেখ্য,
গত বুধবার রাত সাড়ে ৩টায় বেরোবির জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ইং শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘পলিটিক্যাল থট’ কোর্সের ক্লাস নেন অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে এমনকি ফেসবুকে চলছে সমালোচনার ঝড়। এরপর অনলাইন প্লাটফর্ম গুগল মিট-এ রাত ৩টা ২০মিনিটে ক্লাসটি শুরু হয়। প্রায় ৩৫ মিনিট চলা ক্লাসের শুরুতে প্রায় ২৮ জনের মতো যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্লাসে যুক্ত ছিলেন ১২ জন। রাত প্রায় ৩টা ৫৫ মিনিটে ক্লাস শেষ করেন তিনি। এর আগেও মধ্য রাতে ক্লাস নিয়ে সমালোচনায় এসেছিলেন ভিসি কলিমউল্লাহ।
এর আগেও অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববদ্যিালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক কোর্সের ক্লাস নিয়েছেন তিনি। এসব কোর্সের সর্বোচ্চ এক থেকে দুইটি নামে মাত্র ক্লাস নেন তিনি। আর পরীক্ষার খাতা কর্মচারী দিয়ে মূল্যায়ন ও পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীকেও মার্কস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, এসব কোর্স বাবদ মোট অংকের পারিতোষিক নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
এ ছাড়া আরও সমালোচিত হন দিনে বাইশ ঘণ্টা কাজ করার দাবি করে। একাই নিয়েছিলেন ২৬টি কোর্সের দায়িত্ব, নেচেছিলেন হিন্দি গানের সাথে। সবশেষ শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ভাইরাল হন তিনি।
এ ছাড়া তার পক্ষ থেকে নতুন নিযুক্ত উপাচার্যকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘বেরোবির নবনিযুক্ত উপাচার্যকে বর্তমান ভাইস চ্যান্সেললরের অভিনন্দন’। এই ভাষাগত অসঙ্গতি নিয়েও ফেসবুকজুড়ে হচ্ছে ট্রল।
তার এসব কর্মকাণ্ডের কারণে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান তাকে মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার (কলিমউল্লাহ) যারা কাছের লোকজন রয়েছে তাদের উচিৎ তার মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।