muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আইন আদালত

মিনুকে যাবজ্জীবন জেল খাটাতে দেড় লাখ টাকার চুক্তি করেন কুলসুমী

দেড় লাখ টাকার বিনিময় কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলে মিনুকে আদালতে হাজির করেন বলে কুলসুম আক্তার কুলসুমী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার (১ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

এ তথ্য নিশ্চিত করেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন। এর আগে রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, কুলসুমা আক্তার কুলসুমী ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। নগরের রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্ট কর্মী কোহিনূর আক্তার পারভীনকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোহিনূর আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন গার্মেন্ট কর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। পরে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন জমা দেয়। এ মামলায় কুলসুমা আক্তার কুলসুমী হত্যা মামলায় ১ বছর ৪ মাস হাজতবাস শেষে জামিনে বের হয়ে দীর্ঘ ১০ বছর আদালতে হাজিরা দেন। গত ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মামলায় কুলসুমা আক্তার কুলসুমীর যাবজ্জীবন সাজার আদেশ হওয়ায় আসামি কুলসুমা আক্তার কুলসুমী বিষয়টি আসামি মর্জিনা বেগমের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সাজা থেকে বাঁচার জন্য মর্জিনাকে সহযোগিতা করতে বলেন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার মর্জিনা বেগম কুলসুমীকে যাবজ্জীবন সাজা থেকে বাঁচানোর জন্য কুলসুমার সাজার বিষয় নিয়ে গ্রেফতার মো. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি কুলসুমীকে বাঁচানোর জন্য মো. নুর আলম কাওয়াল সঙ্গে আলোচনা করেন। মো. নুর আলম কাওয়াল ও মো.শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কুলসুমার পরিবর্তে আরেকজনকে কারাগারে পাঠাবে বলে মর্জিনাকে জানায়। বিষয়টি কুলসুমা জানতে পেরে এককথায় রাজি হয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেবে বলে জানায়। মর্জিনা মিনুকে টাকার লোভ দেখিয়ে ও এক মাসের মধ্যে জামিন করিয়ে দেবে বলে চুক্তি করেন। ২০১৮ সালের ১২ জুলাই মিনুকে মর্জিনা বেগমের সঙ্গে আদালতে পাঠায়। গ্রেফতার মো. শাহাদাত হোসেন ও মর্জিনা বেগম মিনুকে আদালতে কুলসুমা সাজিয়ে হাজির করেন এবং কুলসুমা হিসেবে ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিনু হাজতে ঢুকে যায়। পরবর্তীতে মিনু কারাগারে যাওয়ার পর গ্রেফতার মো. শাহাদাত হোসেন ও নুর আলম কাওয়াল মর্জিনা বেগমের কাছ থেকে পাওনা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাইলে মর্জিনা ও কুলসুমা আক্তার কুলসুমী টাকা জোগাড় করতে না পারায় কালক্ষেপণ করতে থাকে।

শাহাদাত ও নুর আলম কাওয়াল মর্জিনা এবং কুলসুমা আক্তার কুলসুমীকে বারংবার টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে, টাকা দিতে না পারায় স্থানীয়ভাবে সালিসি বৈঠক করেন। একপর্যায়ে মর্জিনা ও কুলসুমা আক্তার কুলসুমী টাকা দিতে না পেরে ইপিজেড এলাকায় নিজেদের আত্মগোপন করে রাখে। মো. শাহাদাত হোসেন ও নুর আলম কাওয়াল ছিন্নমূল এলাকায় কুলসুমা আক্তার কুলসুমী ও মর্জিনা বেগমের থাকা ২টি প্লট জোরপূর্বক দখল করে বলে আদালতে জবানবন্দিতে কুলসুম আক্তার কুলসুমী জানান।

জবানবন্দি শেষে আদালত কুলসুমা আক্তার কুলসুমী ও সহযোগী মার্জিনা আক্তারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

২৯ জুলাই ভোরে নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে নামের মিল না থাকার পরও কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলে মিনু কারাগারে থাকার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কুলসুমী ও সহযোগী মার্জিনা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন দুপুরে কোতোয়ালী থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) আকাশ মাহমুদ ফরিদ বাদি হয়ে কুলসুমী ও মার্জিনা আক্তারসহ অজ্ঞাত একাধিকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

একই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের ভার্চুয়াল আদালত তাদের ২ দিনেরে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রোববার (১ আগস্ট) ভোরে সীতাকুণ্ড থানার জঙ্গল সলিমপুর কালাপানিয়া দরবেশনগর থেকে নামের মিল না থাকার পরও কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলে মিনু কারাগারে থাকার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জড়িত মো. নুর আলম কাওয়াল (৪৮) ও মো. শাহাদাত হোসেনকে (৪২) গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মো. শাহাদাত হোসেন নামে একজনকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে হাজির করা হলে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ও মো. নূর আলম কাওয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে নভেম্বর তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে পারভিন হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর পরিবর্তে মিনু ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শনকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নন বলে জানান।

গত ২২ মার্চ ‘এক নারীর সাজা খাটছেন অন্য নারী!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন হাইকোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির। পরে জামিনে মুক্ত হন মিনু।

গত ২৮ জুন বায়েজিদ লিংক রোড সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে মিনুর মরদেহ দাফন করা হয়। ট্রাকচাপায় মিনু আক্তারের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক দাবি করেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।

মিনুর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক দুর্ঘটনা আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সড়কের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনাটি রাতের বেলায় হওয়ায় একটু সময় লাগছে।

Tags: