তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আজ বৃহস্পতিবার ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস্সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে আসামি প্রবীর সিকদার আদালতে উপস্থিত হন। এরপর তার উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। এরপর রায় পড়া শেষ হলে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে বিচারক এই রায় ঘোষণা করেন।
তার আগে গত ২২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ১ এপ্রিল ধার্য করেন। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ১১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আদালতের বিচারক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলাটির রায় ঘোষণা হয়নি। আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত। কিন্তু তা প্রস্তুত না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ধার্য করা হয়।
প্রবীর সিকদার বর্তমানে দৈনিক বাংলা ৭১, অনলাইন পত্রিকা উত্তরাধিকার-৭১ নিউজ ও ত্রৈমাসিক পত্রিকা উত্তরাধিকারের সম্পাদক।
২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট এ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা আইনজীবী স্বপন পাল। ওই রাতেই গ্রেপ্তার হন প্রবীর সিকদার। পরে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ওই বছর ১৯ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রবীর সিকদার ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট ফেসবুকে তৎকালীন এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনির হোসেন পরের বছর ১৬ মার্চ চার্জশিট দাখিল করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট প্রবীর সিকদারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার আরজিতে বাদী বলেন, প্রবীর সিকদার গত ১০ আগস্ট বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যার শিরোনাম ছিল ‘আমার জীবনের শঙ্কা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’। শিরোনামের নিচে তার মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন-এমন তিনজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন। এদের মধ্যে এক নম্বরে আছেন এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম। স্ট্যাটাসটি পড়ে আমার দৃঢ়বিশ্বাস হয় যে, প্রবীর সিকদার ইচ্ছাকৃতভাবে গণমানুষের প্রিয় নেতা মোশাররফ হোসেন সম্পর্কে অসত্য লেখা লিখে মাননীয় মন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। লেখাটি জনসমক্ষে প্রকাশের মাধ্যমে উসকানি প্রদান করে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে মন্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে মন্ত্রীর মানহানি ঘটেছে। যা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রবীর সিকদারের বাবাসহ তার পরিবারের ১৪ জনকে হত্যা করে। ২০০১ সালে দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধি থাকাকালে রাজাকারদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন লেখার পর সন্ত্রাসীদের হামলায় তাকে একটি পা হারাতে হয়।