মুখে এসিড ঢেলে ও পরে পানিতে চুবিয়ে বড় ভাইকে হত্যা করে নিজেই হত্যা মামলার বাদী হন ছোট ভাই। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এমন নির্মম হত্যার ৫২ দিন পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছোট ভাই রিপন মিয়া শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আরও পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেন।
জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ও নেশা করতে বাধা দেওয়ার কারণেই বড় ভাইকে নির্মমভাবে হত্যার কথা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে ছোট ভাই রিপন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. শাকুরুল হক খান।
জানা যায়, গত ২৮ জুলাই উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুরে স্বপন মিয়া (৩৭) নামের এক চা দোকানি নিখোঁজ হন। দুদিন পর একটি খাল থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন এই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই রিপন মিয়া বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকেই গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। পরে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় কিশোরগঞ্জ পিবিআইকে। দেড় মাস তদন্ত শেষে পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে স্বপনকে তাঁরই সহোদর রিপন মিয়া হত্যা করেছেন।
শুক্রবার বিকেলে রিপনকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। শনিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ আদালতে জবানবন্দিতে তিনি খুনের দায় স্বীকার করেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
পিবিআই সূত্র জানায়, বড় ভাই স্বপনের সঙ্গে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ থাকার কথা রিপন তার জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন। এ ছাড়াও রিপন মাদকাসক্ত ছিল। বড় ভাই স্বপন নেশা করতে বাধা দেওয়ার কারণেও ক্ষিপ্ত ছিল বলে রিপন স্বীকার করেছেন। এর জেরেই গত ২৬ জুলাই রাতে বড় ভাই স্বপনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রিপন। ঘটনার রাতে ভাইকে বাড়ি থেকে ডেকে বাড়ির পাশের একটি খালের কাছে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তিনি ভাইয়ের মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেন। এ সময় তাঁকে সহায়তা করে আরও কয়েকজন। স্বপন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে তাঁকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়।
ঘটনার দুদিন পর খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
কিশোরগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. শাকুরুল হক খান বলেন, মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখি বাদী রিপন মিয়াই তাঁর বড় ভাই স্বপনকে হত্যা করেছেন। অবশেষে শুক্রবার বিকেলে কৌশলে তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পিবিআই।