আজ ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের বরইতলা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কর্শাকড়িয়াল ইউনিয়নের বরইতলা নামক স্থানে ৩৬৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। সেই থেকে এই দিনটি এখন বরইতলা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে কিশোরগঞ্জবাসী।
প্রতিবছরের মত এবারও গণহত্যায় শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকালে প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। পরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আজিজুল হক, কর্শা কড়িয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন, কর্শা কড়িয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম ভূইয়া ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির, যশোদল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল হক বাবুলসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও হয়নি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত যুদ্ধাপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। এই বর্বর হত্যাকাণ্ড থেকে সৌভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন অনেকেই। সেসব স্মৃতি নিয়ে আজও বেঁচে আছেন তারা। বরইতলা হত্যাকাণ্ডে স্বজনহারা শত শত পরিবার এখনো মানবেতর জীবন- যাপন করছেন। তাদের খবর রাখে না কেউ। এখনো মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি ও মর্যাদা।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের এদিন (১৩ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে কিশোরগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের বরইতলা নামক স্থানে আসে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস। পরে তারা পার্শ্ববর্তী দামপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে ৪-৫ জন নিরীহ স্থানীয় বাসিন্দাকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রাণে বাঁচতে কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়নের দামপাড়া, বীরদামপাড়া, কড়িয়াইল, তিলকনাথপুর, গোবিন্দপুর, চিকনিরচরসহ আশপাশের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগীরা গ্রামের সাধারণ মানুষকে সভা হবে বলে ডেকে বরইতলা নিয়ে যায়।
পরে তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানী সৈন্যদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িঘরে লুটতরাজ, নারী নিপীড়ন ও অগ্নি সংযোগ করে। এ সময় এক রাজাকার গুজব ছড়ায় যে, গ্রামবাসী দুই পাকিস্তানী সৈনিককে মেরে ফেলেছে। এ গুজবের পর বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেললাইনের পাশে বরইতলা নামক স্থানে নিরীহ ৩৬৫ গ্রামবাসীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে।
দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বরইতলা গণহত্যারস্থল পরিদর্শন করেন। পরে বরইতলা নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ নগর’ রাখা হয়। শহীদদের স্মরণে সেখানে তখন একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।
পরে ২০০০ সালে সরকারের সহযোগিতায় বরইতলা এলাকায় রেললাইনের পাশে ৬৬৭ বর্গফুট এলাকায় ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।