স্পোর্টস ডেস্কঃ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রথম আসরেই বাজিমাত করল বাংলাদেশ। বুধবার পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে পরাজয় দিয়ে এশিয়া কাপের মিশন শুরু করলেও এরপর টানা তিন জয় তুলে নিয়ে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা ফাইনাল নিশ্চিত করেছে।
আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তান ৭ উইকেটে ১২৯ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৫ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে মাশরাফির দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে ১৪১ রানের টার্গেট তাড়া করে জয়ের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। সেখানে ১৩০ রানের টার্গেট মামুলি হওয়ার কথা। হেসে-খেলে জয় না পেলেও সৌরভ, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই তামিমের ব্যাটিং ঝলক। অবশ্য ব্যাটিং ঝলকটা এক বাউন্ডারিতেই সীমাবদ্ধ। পাকিস্তানের পেস আক্রমণের রাজা মোহাম্মদ আমিরকে ডিপ স্কয়ার দিয়ে ফ্লিক করে যে ছয় তামিম হাঁকিয়েছেন তা মুগ্ধ করেছে সবাইকে। তবে সদ্য পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়া তামিম বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। মোহাম্মদ ইরফানের বলে আউট হন ৭ রানে। এরপর সাব্বির রহমান স্কোরবোর্ডে ১৪ রান যোগ করে সৌম্যর সঙ্গে ৩৩ রানের জুটি গড়েন। পাকিস্তানের অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির বলে দলীয় ৪৬ রানে বোল্ড হন সাব্বির।
তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিতে থাকেন সৌম্য সরকার। প্রথম তিন ম্যাচে রান না পাওয়া সৌম্য দারুণ ব্যাটিং করে ছন্দে ফেরেন। চোখ ধাঁধানো শটে তুলে নেন ৫ চার ও ১ ছয়। হাফসেঞ্চুরি থেকে ২ রান আগে মোহাম্মদ আমিরের বলে বোল্ড হয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন সৌম্য। সৌম্যর পর মুশফিকুর রহিম (১২) ফিরে গেলে আরও চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। তখন পুরো ভার চলে আসে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর উপর।
১৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ মোহাম্মদ ইরফানকে মিড অফ দিয়ে ছয় মেরে চাপ কমিয়ে নিয়ে আসেন। মাহমুদউল্লাহর শট দেখে কমেন্ট্রি বক্সেও প্রশংসা,‘শট অফ দ্যা টুর্নামেন্ট সো ফার।’ পরক্ষণেই সাকিব (১৩ বলে ৮ রান) ‘অযাচিত’ শট খেলতে গিয়ে আউট হলে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা বাংলাদেশ।
এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম দুই বলে আমিরকে দুই চার মেরে শুরু। এরপর জয়ের বাকি কাজটুকু পূর্ণ করেন মাহমুদউল্লাহ-মাশরাফি। শেষ ১২ বলে ১৮ রানের প্রয়োজনে ব্যাটিং করেন তারা। মোহাম্মদ সামির করা ১৯তম ওভারে ১৫ রান তুলে জয়ের পথ সুগম করেন দুই যোদ্ধা। শেষ ওভারে ৩ রানের প্রয়োজনে ব্যাটিং করে মাহমুদউল্লাহ প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে জয় নিশ্চিত করেন। ফিনিশার মাহমুদউল্লাহ ১৫ বলে ২২ ও মাশরাফি ৭ বলে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।
মিরপুরে টসে জিতে আফ্রিদি বল তুলে দিলেন মাশরাফির হাতে। কি ভুলটাই না করলেন বাঁচা-মরার ম্যাচে! তিন পেসার তাসকিন, আল-আমিন ও মাশরাফি এবং দুই স্পিনার সাকিব ও আরাফাত সানী যে ব্যাটসম্যানদের এতটা নাকানিচুবানি খাওয়াবে তা কল্পনাও করতে পারেননি আফ্রিদি! প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানের রান মাত্র ৩৪, ৪ ব্যাটসম্যান হারিয়ে। যা তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম ১০ ওভারে সর্বনিম্ন রান। প্রথম ১০ ওভারের পাশাপাশি পাওয়ার প্লেতেও সর্বনিম্ন রান তুলে পাকিস্তান (৩ উইকেটে ২০)।
সবমিলিয়ে শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে। পঞ্চম উইকেটে দৃশ্যপটের পরিবর্তন। শোয়েব মালিক ও শারফরাজ আহমেদ যোগ করেন ৭০ রান। তাতেই প্রতিরোধ। ইনিংসের ১৪-১৬তম ওভারে ৪৯ রান নিয়ে মিরপুরের প্রায় ২৫ হাজার দর্শককে শান্ত করে দেন মালিক-শরফরাজ। তবে শেষ দিকে আবারও তাদের গণবিদারী চিৎকার। উপলক্ষ্যটা তৈরী করে দেয় বোলাররা। সচরাচর টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানরা ঝড় তুলে বোলারদের কড়া শাসন করেন।
তবে বাংলাদেশের জয়ের দিনে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা নতজানু। ৭ উইকেটে ১২৯ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ওভার প্রতি তাদের রান ৬.৪৫। যা টি-টোয়েন্টিতে একেবারেই বেমানান। সর্বোচ্চ ৫৮ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন শারফরাজ আহমেদ। ৪২ বলে ৫ চার ও ২ ছ্ক্কায় ইনিংসটি সাজান উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ৪১ রান আসে শোয়েব মালিকের ব্যাট থেকে। মুস্তাফিজবিহীন বাংলাদেশের সেরা বোলার আল-আমিন হোসেন। ২৫ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি উইকেট নেন মুস্তাফিজের পরিবর্তে দলে আসা আরাফাত সানী। ১টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে সাকিব ছিলেন উইকেটশূণ্য। তবে জয়ের দিন সাকিবের পারফরম্যান্স যেন আড়ালেই থেকে গেল!
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।