সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিতভাবে হয়রানিমুক্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
এ প্রসঙ্গে একটি চীনা প্রবাদের কথা স্মরণ করিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আইনের আশ্রয় নেওয়ার অর্থ একটি বিড়ালের জন্য একটি গরু হারানো’- চীনা সেই প্রবাদের মতো যাতে বিচারপ্রার্থীদের অবস্থা না হয়, বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিতভাবে তা নিশ্চিত করতে হবে।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কিশোরগঞ্জের নবনির্মিত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একজন আইনবিদ প্রতিবেশী হিসাবে ভাল নয়- ফ্রাংকলিনের এ কথা যেন মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বিচারপ্রার্থী মানুষ আপনাদের কাছে আসে তাদের সমস্যার সমাধানে ও ন্যায় বিচার পেতে সহায়তার জন্য। তাই তারা যাতে কোনোভাবে কোনো ধরনের হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
১৯৯০-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবার কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন আবদুল হামিদ। প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই সমিতির সঙ্গে তিনি যুক্ত। অনু্ষ্ঠানে সেই স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের পর থেকে সরাসরি কোর্টে যাওয়া হয় না। কিন্তু কিশোরগঞ্জের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ককে ভুলে থাকা যায় না।
নিজের নামে কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্মিতব্য ভবনের নামকরণ করায় আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এই ভবন কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিটি সদস্যের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। আজ এই ভবনের নির্মাণ কাজের শুভ সূচনা হচ্ছে। আমি আশা করছি, এই ভবনের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের বিজ্ঞ আইনজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তারা মনোরম ও স্বাচ্ছ্যন্দময় পরিবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন।
এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী জনগণও আইনজীবীদের কাছ থেকে আরও উন্নত সেবা পাবেন বলে আশা করেন রাষ্ট্রপতি।
মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় দেওয়ার উপায় বের করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারের বাণী যাতে নীরবে-নিভৃতে না কাঁদে- এ কথার পরিবর্তে ‘বিচারের বাণী বৃথা যাবে না’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে বিচার বিভাগ সংবিধানকে সমুন্নত রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বর্তমান সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলা সদরে এবং সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গরিব ও অসহায় লোকজন আইনি সহায়তা পাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচারিক কাজে সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসাবে আজ কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের উদ্বোধন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৩১টি জেলায় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্ধোধন করা হলো। আমার প্রত্যাশা- এ ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিচারপ্রাপ্তির সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, কিশোরগঞ্জের দায়রা জজ মো. সায়েদুল রহমান, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহ আজিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।