জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সুনামগঞ্জে পৃথক ৫০ মামলায় ‘লঘু অপরাধে’ অভিযুক্ত ৭০ শিশুকে কারাগারে না পাঠিয়ে ৯টি শর্তে সংশোধনের জন্য পরিবারের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন ব্যতিক্রমী এ রায় দেন।
সুনামগঞ্জ শিশু ও মানবপাচার আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট হাসান মাহবুব সাদী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এক বছরের প্রবেশনকালীন সময়ে শিশুদের ৯টি শর্ত পালন করতে হবে। শর্ত পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান।
রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মীরা প্রত্যেক শিশুর হাতে বাংলাদেশের পতাকা, ফুল ও একটি করে ডায়েরি তুলে দেন। এ সময় শিশুদের মা-বাবা ও স্বজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ৫০টি পৃথক মামলায় ৭০ শিশুকে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জড়ানো হয়েছিল। যার কারণে এসব শিশুকে আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হতো। ফলে শিশুদের ভবিষ্যত ও শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছিল। তাই ৯টি শর্তে শিশুদের এসব অসুবিধা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে সব মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত।
রায়ে প্রবেশনকালীন সময়ে শিশুদের যেসব শর্ত পালনের কথা আদালত উল্লেখ করছেন সেগুলো হলো, শিশুদের নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু ভালো কাজ করা এবং ডায়েরিতে তা লিখে রাখা, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, সবার সঙ্গে সদ্ভাব ও ভালো ব্যবহার করা, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা এবং তাদের সেবা-যত্ন ও কাজেকর্মে সাহায্য করা, নিয়মিত ধর্মগ্রন্থ পাঠ এবং ধর্মকর্ম পালন করা, প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ানো।
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা সফিউর রহমান বলেন, শিশুরা আদালতের শর্ত ঠিকমতো প্রতিপালন করছে কিনা, তা আমি দেখব। তিন মাস পরপর আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রবেশনের মেয়াদ শেষ হলে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
একটি মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী রোকেস লেইস বলেন, এ রায়ের ফলে শিশুরা সংশোধনের সুযোগ পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।