দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় ট্রেনে ভ্রমণে ইচ্ছুক যাত্রীরা আশায় বুক বেঁধে আছেন- কবে ট্রেন চালু হবে। আজ (বুধবার) বিকালে রেলমন্ত্রী ও ভারতীয় হাইকমিশনারের সৌজন্য বৈঠকেও সুরাহা হয়নি, কখন কোন দিন কাঙ্ক্ষিত ট্রেন চলাচল করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি অংশ আশা করছিলেন, আগামী স্বাধীনতা দিবসে দুদেশে চলা তিনটি ট্রেন আবার চলাচল করবে। কিন্তু আগামী পহেলা বৈশাখেও তিনটি ট্রেন চলবে কি না- তাও নিশ্চিত হয়নি এখনো। ফলে দীর্ঘ ২ বছর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় দেশের সরকার যেমন আয় বঞ্চিত হচ্ছে, বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে গত ২০ মার্চ আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেও দুদেশের মধ্যে দ্রুত সময়ে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উভয় দেশের রেলওয়ে মন্ত্রণালয় ট্রেন পরিচালনায় প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুদেশের স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই কেবল ট্রেন পরিচালনা করা যাবে।
অপরদিকে বর্তমানে রেলপথে কোনো ভিসাই ইস্যু করছে না উভয় দেশ। আকাশ ও সড়কপথের সঙ্গে রেলপথেও ভিসা ইস্যু করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বুধবার বিকালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। দুজনের মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টার আলোচনায় রেলওয়ে এলওসির অর্থায়নে চলমান প্রকল্প ছাড়াও উভয় দেশে দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো চালুর বিষয়ে কথা হয়।
বৈঠক শেষে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী যুগান্তরকে বলেন, দুদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ একটি অন্যতম মাধ্যম। ট্রেন চালাতে উভয় দেশের রেলওয়ে মন্ত্রণালয় প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া উভয় দেশের স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। আমরা বর্তমানে ট্যুরিস্ট ভিসাসহ মেডিকেল ভিসাও দিচ্ছি। রেলপথে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। তাছাড়া উভয় দেশে বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো এখনো চালু হচ্ছে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নিশ্চয় দ্রুত সময়ের মধ্যে উভয় দেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হবে। তখন রেলপথেও ভিসা ইস্যু করা হবে।
বুধবার এ নিয়ে রেলভবনে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ট্রেনে ভ্রমণকারী বহু যাত্রী অপেক্ষায় আছেন কখন ট্রেন চালু হবে। এ বিষয়টি আমরা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছি। আকাশপথে ভাড়া বেশ বেশি, ট্রেনে ভাড়া বেশ কম। বর্তমানে সব ধরনের ভিসা শুধু বিমানপথে চালু রয়েছে। ট্রেন সাধারণ মানুষের, নিশ্চয় দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হবে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ রেল পুরোপুরি প্রস্তুত। ভিসা ইস্যু এবং ট্রেন চালু হলেই আমরা যথাযথ সেবা প্রদান করতে পারব। ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। উভয় দেশ খুবই আন্তরিক। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রেন পরিচালনা করতে চায়। কিন্তু দুদেশের স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব। আমাদের আশা ছিল, স্বাধীনতা দিবসে বন্ধ থাকা তিনটি ট্রেন চালু হবে। এখন আমরা আশা করছি, আগামী পহেলা বৈশাখে বন্ধ থাকা তিনটি ট্রেন চালু হবে। এ জন্য উভয় দেশের মধ্যে চিঠিপত্র আদান-প্রদান হচ্ছে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচলের তিনটি রুট রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা-কলকাতা রুটে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ এবং খুলনা-কলকাতা রুটে ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ আগে থেকে চালু ছিল। গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে উদ্বোধন করা হয় ‘মিতালী এক্সপ্রেস’, যা উদ্বোধনের পর আর চালুর সুযোগ হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে দুদেশে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।