বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের ১১ সদস্য কানাডার উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছেন।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তারা কানাডার উদ্দেশে রওনা হন।
শুক্রবার মুহিবুল্লাহর পারিবারিক বন্ধু মানবাধিকারকর্মী নূর খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।তিনি বলেন- ১১ জনের মধ্যে মহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন, ৯ ছেলেমেয়ে ও এক মেয়ের জামাই রয়েছেন।তাদের ‘রিফিউজি’ মর্যাদা দিয়ে কানাডার ‘গভর্নমেন্ট অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রামের’ আওতায় দেশটিতে নেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। নিজ অফিসে অস্ত্রধারীরা তাকে পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। এ সময় তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ‘এমএসএফ’ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে উখিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পরই তার স্বজন ও অনুসারীরা হন্যে হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন।তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।
মুহিবুল্লাহর উত্থান : ইংরেজি জানার কারণে মুহিবুল্লাহ সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনে (আরএসও) মুখ্য ভূমিকা পালন করায় ১৯৯২ সালে তিনি মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন। মাঝখানে মিয়ানমারে চলে যান।
২০০০ সালের শুরুতে ১৫ জন সদস্য নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) নামের সংগঠন। উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান তিনি।
তাদের জমায়েত করার চেষ্টা করে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের নেতা হয়ে ওঠেন। তখন বাংলাদেশ থেকে সহজে মিয়ানমারে যাতায়াত করার কারণে সে দেশে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে দ্বিতীয় বার বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন, আশ্রয় নেন উখিয়া ক্যাম্পে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকটি সংগঠন কাজ করলেও মুহিবুল্লাহর এআরএসপিএইচ সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী।
এ সংগঠনে ৩০০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরা সফর করা ছাড়াও ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন সেখানেও ছিলেন মুহিবুল্লাহ।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর তিনি আরও সামনে চলে আসেন। তাকে আখ্যায়িত করা হচ্ছিল রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসাবে। মুহিবুল্লাহর মূল উত্থান হয় ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা আগমনের বর্ষপূর্তিতে।ওই দিন তিনি ৩-৫ লাখ রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটিয়ে আলোচনার শীর্ষে আসেন। উখিয়া-টেকনাফের ৩২ রোহিঙ্গা শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে ওঠে তার।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর গণহত্যার মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। সব মিলে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় অবস্থান করছে।