মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭২১টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ আগামীকাল মঙ্গলবার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অপেক্ষায় এক কোটির বেশি ভোটার।
এবারই প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এদিকে ভোটের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে উৎসবের পাশাপাশি প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনী প্রচারকালীন বেশ কিছু এলাকায় সহিংস ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে। ভোট গ্রহণের সময় সংঘাত-সহিংসতা ও গোলাযোগের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে শংকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও শতাধিক প্রার্থী। এতে কেন্দ্র দখল, ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা, প্রতিপক্ষকে এলাকা ছাড়াসহ নানা অভিযোগ এনে কমিশনের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এ পর্যন্ত কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। আর যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি। এরপরও ইতিমধ্যে কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে যা আমাদের নজরে এসেছে। বেশ কিছু ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়েছি। আশা করি, সামনে বড় ধরনের অঘটন ঘটবে না। তিনি বলেন, সংঘাত-সংঘর্ষ হলেই ব্যবস্থা নেবে আইনশৃংখলা বাহিনী। আমরা বলে দিয়েছি, কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। এটা মুখের কথা নয়। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কেউ ছাড় দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনে সহিংসতার আশংকা খোদ কমিশনারদের মধ্যে রয়েছে। কয়েকটি স্থানে পুলিশের বিরুদ্ধেই আইনশৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতিতে পদক্ষেপ না নেয়ার তথ্য পাঠিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ইউপি নির্বাচনে মারামারি হচ্ছে, হবে এটাই বাস্তবতা। এগুলো বন্ধ করা খুব কঠিন। আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এ নির্বাচনে রোববার রাত ১২টায় প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। তাই রোববার ভোর থেকেই গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য প্রার্থীরা। এখন অপেক্ষা ভোটের। প্রথম ধাপে ৭৩৪টিতে ভোট হবে। এর মধ্যে ২২ মার্চ ৭২১টি, ২৩ মার্চ ১১টি ও ২৭ মার্চ বাকি দুটিতে ভোট গ্রহণ হবে। এই ধাপে তিনটি পদে ৩৬ হাজার ৪৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭ হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৪, সদস্য পদে ১৭৯ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা সবাই আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৭৩৩ ও বিএনপির ৬১৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রথম ধাপে ১২১টিতে বিএনপির প্রার্থী নেই। অপরদিকে একটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেই। নির্বাচনে জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এতে ভোট কেন্দ্র ৭ হাজার ৮৭টি এবং ভোটার ১ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৪১।
জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের আশংকা প্রকাশ করে গত কয়েকদিনে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগের স্তূপ জমা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা তাদের অভিযোগে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রচারকে কেন্দ্র করে অন্তত ৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে কয়েকশ’ লোক আহত হয়েছেন। রোববার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতীর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ইউপিতে প্রার্থিতা প্রত্যাহরের জন্য চাপপ্রয়োগ, প্রার্থীদের বাড়িঘর ভাংচুর, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, সভা-সমাবেশে হামলা, প্রশাসনিক চাপ, মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। তাদের চাপে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না। অভিযোগের সঙ্গে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ৪টি ইউপি, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার একটি, ফকিরহাট উপজেলার একটি, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৫টি, কালীগঞ্জ উপজেলার ৫টি, ঘোড়াঘাট উপজেলার একটি, পটুয়াখালী সদর উপজেলার একটি, সিরাজদিখান উপজেলার একটি, লালপুর উপজেলার একটি, আলোককান্দা উপজেলার তিনটি, নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার একটি ও পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার একটি ইউপিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। প্রতিনিধি দলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ইকবাল হোসেন রাজু, নুরুল ইসলাম নুরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এক অভিযোগে সাতক্ষীরার কলোরোয়া উপজেলার ১০ নম্বর কুশোডাঙ্গা ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এমএম জাহাঙ্গীর হোসেন ৬টি কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করে বলেন, ওই ভোট কেন্দ্রগুলো দখলের ষড়যন্ত্র চলছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিজে প্রকাশ্যে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। বিষয়টি কলারোয়া থানা পুলিশ ও রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। থানার ওসি নিজেই পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন। ভোট লুটের জন্য অন্য এলাকা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের আনা হয়েছে। রাতে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা এলাকা পাহারা দিচ্ছে। ওই উপজেলার ১২ নম্বর যুগিখালী ইউপির বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, দলভিত্তিক এ নির্বাচনে আচরণবিধি লংঘনে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনার মুখে রয়েছে ইসি। সংঘর্ষ-সহিংসতার ঘটনা খতিয়ে দেখতে শুধু গণমাধ্যমের প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পাঠিয়ে কাজ সেরেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। তবে নির্বাচনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোববার মাঠে নেমেছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিয়নে পুলিশের একটি মোবাইল ফোর্স ও প্রতি তিন ইউনিয়নে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি উপজেলায় র্যাবের দুটি মোবাইল ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির দুটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড নির্বাচনী আইনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করছে। এছাড়া নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন।
দল ও প্রার্থীদের সহিষ্ণুতা দেখানোর অনুরোধ : নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ নির্বাচনে সব দল ও প্রার্থীদের সহিষ্ণুতা দেখানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের বলেছি, অনিয়ম মুখ বুজে সহ্য করবেন না। ভোটে কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি ও লাঞ্ছিত করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি কোনো ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার ওপর হামলা করা হয় বা তাদের জোরপূর্বক কোনো কিছু করা হয় তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করা হবে না।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/21-03-2016/মইনুল হোসেন