অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাফসা নাদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে পূর্বের কর্মস্থল বাসাইল উপজেলায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে বিয়ের প্রলোভনে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই তাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আবেদনের পাশাপাশি ইউএনও মনজুর হোসেনকে আইনি নোটিশ পাঠান ওই ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী। এমন আবেদনের পর এ ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা।
ওই কলেজছাত্রী অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে বাসাইলের ইউএনও থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউএনওর সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ইউএনও ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বাসাইলস্থ সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ের আশ্বাসে কৌশলে তাকে ধর্ষণ করেন তিনি।
ওই সময়ে একাধিক স্থান থেকে কলেজ শিক্ষার্থীটির বিয়ের প্রস্তাব এলে ইউএনওর পরামর্শে তা প্রত্যাখ্যান করেন ওই ছাত্রী। ওই কলেজছাত্রীকে নিয়ে ইউএনও মনজুর হোসেন এক পর্যায়ে টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজের পাশে পাওয়ার হাউজের পেছনে এক বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা দুই মাস থাকার পর বিয়ের মাধ্যমে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে চাপ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
তখন ইউএনও জানান, ভারত ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন তিনি।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মনজুর হোসেনের পরিচিত জোবায়েত হোসেন ও সরকারি গাড়ির চালক বুলবুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যান। ওই বছরের ১২ অক্টোবর তারা ভারত থেকে দেশে ফেরেন। ভারতে অবস্থানকালে তারা অধিকাংশ সময় নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছেন। তারা ভারতের হায়দারাবাদ হাসপাতালের কাছে একটি বাসা নিয়ে সেখানে অবস্থান করে চিকিৎসা নেন।
ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনও’র ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারেন মনজুর হোসেন বিবাহিত এবং তার দুই সন্তান রয়েছে। ইউএনও’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি গোপন করেছে বলে স্বীকার করেন।
১২ অক্টোবর ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পর তারা নিজ নিজ ঠিকানায় চলে যান। পরে ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরে তারা আবার দেখা করেন। এ সময় মনজুর হোসেন পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন গড়িয়ে পাওয়ার পরও বিয়ে না করায় পুনরায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।
শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্রমতে, ওই ছাত্রীকে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি ওই ছাত্রীর পক্ষে গত ২২ মার্চ ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান।