muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

‘স্বেচ্ছায় পদত্যাগের পথ বেছে নিতে পারে অর্থমন্ত্রীও’!

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ– বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ লোপাট নিয়ে এই মুহূর্তে বেশ চাপে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন বাজারে । কোনো কথা না বললেও তিনিই এখন গণমাধ্যমের প্রধান শীরোনামে ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের মতো স্বেচ্ছা পদত্যাগের পথ বেছে নিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। গভর্নরের পদত্যাগের পর থেকেই এ নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। এ গুঞ্জনের ডালপালা গজাতে শুরু করে গত শনিবার রাত থেকে। রোববারও সারাদিন চলেছে মুখরোচক নানা আলোচনা। এদিন মন্ত্রিসভার ক্রয় কমিটির বৈঠকেও আসেননি অর্থমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরির পর ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী ও আতিউর রহমান। আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও এখন অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ নেতারাই। প্রথম আলো পত্রিকায় সাক্ষাতকার দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীও অর্থমন্ত্রীকে ভৎর্সনা করেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের বেশ কয়েকটি দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, ‘চুড়ান্ত তোপের মুখে এবার পদত্যগ ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছেনা অর্থমন্ত্রীর’ ।

রোববার দিবাগত রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে বেফাঁস মন্তব্য না করতে সবাইকে সতর্ক করে দেয়ার পর নতুন মাত্রা পেতে শুরু করে পদত্যাগ গুঞ্জন। সভায় অর্থমন্ত্রীর অতিকথন নিয়ে কথা তোলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম।

এদিকে সোমবার মন্ত্রিসভার নির্ধারিত বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর যোগ দিতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় গুঞ্জনের ভিত্তি আরও মজবুত হতে থাকে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে এড়িয়ে যান অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদে থেকে পদত্যাগ করেন ড. আতিউর রহমান। তার পদত্যাগের চারদিন পর গত শনিবার ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে অর্থ লোপাটসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮’শ কোটি টাকা চুরি, সে খবর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এক মাস গোপন রাখা, গভর্নর হিসেবে আতিউরের কার্যক্রম, নিজের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থ লোপাটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয় স্পষ্ট করে অর্থমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সম্ভব হতো না। রিজার্ভ স্ফীতিতে বড় ভূমিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের উল্লেখ করে মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে সাবেক গভর্নর ড. আতিউরের ভূমিকা প্রায় শূন্য। বিদায়ী গভর্নর দেশে ও বিদেশে শুধু বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা ও বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন ওই সাক্ষাৎকারে। এগুলো নিয়ে ‘সব সময় কথা বলা যায় না’ বলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন অর্থমন্ত্রী।

এ সাক্ষাৎকার প্রকাশের পরই তোলপাড় শুরু হয় সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ও সংবাদপত্রে কলাম লিখে অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুহ আলম লেনিন।

যদিও পরে সাক্ষাৎকারের অনেক বক্তব্যই বিকৃত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। গণমাধ্যমের ‘অহরহ তথ্যবিকৃতি’ নিয়েও ক্ষোভ ঝেড়েছেন তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে অর্থনীতি সমিতির এক অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি যখন যেটা সুবিধা মনে করেন তখন সেটা বলেন’। তার অর্থনৈতিক নীতির সমলোচনাও করেন অধ্যাপক বারকাত।
দলের একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক করা আছে, তবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নয়, আগামী বাজেট পাশের পর জুলাই আগস্টের দিকে আসতে পারে পদত্যাগের ঘোষণা ।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক প্রার্থনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত অর্থমন্ত্রীর ব্যর্থতা তুলে ধরে টাকার চুরির বিষয়ে তার দিকেও সন্দেহের ইঙ্গিত করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসীন দলের একধিক নেতা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লোপাট, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা অর্থমন্ত্রীর ওপর সন্তুষ্ট নন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বও। এ বার্তা নানাভাবে দেয়াও হয়েছে তাকে।

অবশ্য অনেক আগে থেকেই অর্থমন্ত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ বিভিন্ন মন্ত্রী। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ে কার্পণ্য করার কারণে বহু প্রকল্প বিলম্বিত হওয়া এবং কোনো কোনোটার কার্যক্রম শুরু করতে না পারা ক্ষোভ জানা গেছে বহুবার।

রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাটে সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের পর এ দায় নিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ অপ্রত্যাশিত নয়। মন্ত্রী হিসেবে এ দায় কোনভাবেই এড়াতে পারে না তিনি।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন নেতারা। রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শাসক দলের সিনিয়র নেতারা দাবি করেন, এ বক্তব্যে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
তারা আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বিদায়ী গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সমালোচনার পাশাপাশি একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বক্তব্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তবে রোববার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে একই ইস্যুতে আওয়ামী লীগের নেতারা অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীরব থাকেন। তিনি কোনো মন্তব্য না করে নেতাদের বক্তৃতা শোনেন। তবে গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সমালোচনা করায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিনকে ভৎর্সনা করেন। পার্টির সিদ্ধান্তের বাইরে লেনিন কেন এমন মন্তব্য করলেন তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।

তবে দলের অন্য একটি সুত্র বলছে, স্বেচ্ছায় অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে এ মুহূর্তে কোনো পদক্ষেপে নাও যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এসময়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে পরিবর্তন কিংবা সরিয়ে দেয়া সরকারের ওপর আস্থার সঙ্কট তৈরি হবে কি না তাও সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সব মিলিয়ে অর্থমন্ত্রীর পদে পরিবর্তনে অপেক্ষা করতে হতে পারে পরবর্তী মন্ত্রিসভা রদবদল পর্যন্ত। শিগগিরই মন্ত্রিসভায় এ রদবদল হচ্ছে বলা হলেও ঠিক কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছে না কোনো সূত্র।

গত ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের ইংরেজি দৈনিক ইনকোয়ারার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের তথ্য ফাঁস করে। রিপোর্টে বলা হয়, ৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি এ টাকা লোপাট করে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে ৮১ মিলিয়ন ডলার এবং শ্রীলংকার একটি ব্যাংকে পাঠানো হয় ২০ মিলিয়ন ডলার।

শ্রীলংকায় পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ফিলিপাইনে পাচার হওয়া যে টাকা জুয়ার আসর হয়ে হংকংয়ে চলে গেছে তা ফেরত আনার সম্ভাবনা কম বলেই জানা যাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধারন কন্ঠ ডটকম/22-03-2016/মইনুল হোসেন

Tags: