কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফসল নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের। ইটনা, মিঠামইন, নিকলী ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ৫৩টি হাওরের ৩০টি ফসলরক্ষা বাঁধে ছুঁইছুঁই করছে পানি। দু-এক দিনের মধ্যে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ অবস্থায় ফসলডুবির শঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কেটে ফেলার আহ্বান জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করছে প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুদিন ধরে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের বেশিরভাগ নদীর পানি বেড়ে গেছে। বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে মেঘনা, ধনু, কালি ও কুশিয়ারা নদীর পানি। ইটনায় ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করায় হুমকির মুখে পড়েছে জিওলের বাঁধ।
দুই সপ্তাহ আগে উজানের ঢলে তলিয়ে যায় কিশোরগঞ্জের নদীতীরবর্তী প্রায় ৮০০ হেক্টর জমির ধান। দ্বিতীয় দফায় জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় জলমগ্ন হাওরে কোমরপানিতে কাঁচা-পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন হাওরের কৃষক। কোথাও আবার কৃষক রাত জেগে বাঁধ পাহারার পাশাপাশি দিনে তলিয়ে যাওয়া ধান কাটছেন।
এদিকে শনিবার প্রায় ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা সারাদিন চেষ্টা করে কোনোভাবে বাঁধ রক্ষা করেন।
ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একজন কৃষক বলেন, ইতোমধ্যে একবার পানিতে তলিয়ে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি আবার পানি বাড়ে, তাহলে তো ’কৃষক শেষ’। নিঃস্ব হওয়ার ভয়ে অনেক কৃষকই তার জমির ফসল কেটে ফেলছেন। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
হাওরের অবস্থা ভালো নয় এমন খবরে গতকাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল হাওরের ফসল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো পরিদর্শন করে নানা নির্দেশনা দিয়েছেন।
পানি এখনো বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচে আছে জানিয়ে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, প্রতিদিনই যে হারে পানি বাড়ছে, এ হারে বাড়তে থাকলে আগামী এক থেকে দুদিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে হাওরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকবে। তাই আমরা আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।