সব চেষ্টা ব্যর্থ করে, সব ভালোবাসাকে ছিন্ন করে চলে গেলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল। মঙ্গলবার বিকেলে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। প্রায় তিন বছর ধরে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন জাতীয় দলের এ বাঁহাতি স্পিনার।
মোশাররফ হোসেন রুবেলের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর পৌরসভার বসন্তপুর এলাকায়।
সাবেক এই তারকার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সন্ধ্যা থেকে তার গ্রামের বাড়ি বাজিতপুর ও কিশোরগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনসহ সর্বসাধারণের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুবেলের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছেন ভক্তরা।
রুবেল জাতীয় দল ছাড়াও যুক্ত ছিলেন কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনগুলোর সঙ্গে। খেলার মাধ্যমে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লীগে। তিনি জেলার সূর্য সংঘ দলের মাধ্যমে প্রথম কিশোরগঞ্জ লীগে পা রাখেন। তারপর দীর্ঘদিন নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে অজয় স্মৃতি সংসদ ক্লাবে খেলার মাধ্যমে দ্যুতি ছড়িয়েছেন জেলা ক্রিকেটে।
২০১৯ সালে ব্রেন টিউমার শনাক্ত হয় মোশাররফ হোসেন রুবেলের। এরপর তিনি পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। সেখানে দফায় দফায় চলছিল কেমোথেরাপি। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে করা হয়েছিল অস্ত্রোপচার। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়মিত সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বরে সর্বশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।
২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রুবেল। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হন। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা যায়, পুরনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয় কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছিলেন রুবেল। গত কিছুদিন রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করলেন তিনি।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল মোশাররফ রুবেলের। তবে টিকতে পারেননি বেশিদিন। ২০১৬ সালে খেলেছেন সবশেষ ম্যাচ। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবমিলিয়ে ৫ ওয়ানডেতে চার উইকেট ও ২৬ রান করেছেন তিনি।
তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন এ স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচে ১৯ বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ মোট ৩৯২ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ব্যাট হাতে দুই সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৩০৫ রান।
এছাড়া সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ১০৪ ওয়ানডেতে ১২০ উইকেটের সঙ্গে ১৭৯২ রান এবং ৫৬ টি-টোয়েন্টিতে ৬০ উইকেটের সঙ্গে ৬২ রান করেছেন তিনি। সবশেষ ২০১৯ সালের বিপিএলে স্বীকৃত পর্যায়ে ম্যাচ খেলেছেন রুবেল।