muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

মহাশূন্যেও সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে চায় ভারত : মোদি

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- ক্রমবর্ধমান সহযোগিতার অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় ১০ জিপিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি শুরু হয়েছে।

ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নয়াদিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বাসস জানায়, ত্রিপুরা থেকে ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। তাঁরা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বক্তব্য দেন।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পর বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশ যেভাবে জলে, স্থলে এবং ডিজিটাল বিশ্বে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, সেভাবে মহাশূন্যেও সেই সহযোগিতার ক্ষেত্র ভারত সম্প্রসারিত করতে চায়। তিনি বলেন, তাঁর দৃঢ় ইচ্ছা জল, সড়ক ও আকাশপথে দিল্লি যেমন ঢাকার পাশে ছিল, তেমনি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটেও ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকতে আগ্রহী। মোদি বলেন, উন্নয়নের পথে প্রতিবেশী দুটি দেশ কী করে বোঝাপড়ার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে তার দৃষ্টান্ত রচিত হলো আজ। মোদি সমগ্র দেশবাসীকে হোলির শুভ কামনা জানিয়ে বলেন, হোলি রঙের উৎসব। এই উৎসবের দিন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন হওয়ায় দুই দেশের সম্পর্ক নতুন রঙে রাঙল।

নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই শেখ হাসিনাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের (১৭ মার্চ) শুভেচ্ছা জানান এবং আসছে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণকে অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারতের সহযোগিতার কথা সশ্রদ্ধচিত্তে সব সময় স্মরণ রাখার জন্য তিনি শেখ হাসিনার কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের আগুনঝরা দিনগুলোর কথা স্মরণ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই দুঃখের দিনগুলোতে যেমন ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকেছে, এখন বাংলাদেশ যখন উন্নতির শিখরে আরোহণ করছে তখনো তাদের পাশে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে আমরা সমগ্র বিশ্বের সামনে অনন্য নজির স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছি।’
প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটি দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং একজন মুখ্যমন্ত্রী সহযোগে প্রকল্প উদ্বোধনের ঘটনা বিশ্বে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে উল্লেখ করে ভবিষ্যতে দুই দেশের যোগাযোগের আরো নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপাল) সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে জানান মোদি।

আঞ্চলিক সংযোগ এ অঞ্চলে ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ ও ব্যান্ডউইডথ বিনিময়কে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তযোগাযোগ হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ‘নতুন দিগন্ত’।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সহযোগিতার পরবর্তী ক্ষেত্র হবে আন্তসংযোগের সম্প্রসারণ। বিদ্যুৎ ও ব্যান্ডউইডথ বিনিময় পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য একটি ‘চমৎকার নিদর্শন’। আজ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সুখের দিন।”

শেখ হাসিনা ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ রপ্তানিকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নতুন উচ্চমানে পৌঁছেছে। আমি নিশ্চিত আমাদের জনগণের বৃহৎ কল্যাণে এ ধরনের আরো অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত অপেক্ষা করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমদানি আমাদের জ্বালানি চাহিদা পূরণে সাহায্য করবে। আর বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ পেয়ে ত্রিপুরা এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে ডিজিটাল সংযোগ বাড়বে এবং সেখানকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বন্ধন সুদৃঢ় করবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, আঞ্চলিক সংযোগ এ অঞ্চলে ব্যাপক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। তিনি বলেন, ‘সড়ক-রেল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ গ্রিড ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিবিআইএন ফ্রেমওয়ার্কে আমরা সম্মত হয়েছি। এর আওতায় যৌথ উন্নয়ন ও বিনিয়োগের জন্য আমরা নেপাল ও ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যান্ডউইডথ ভাগাভাগি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহের মতো নতুন নতুন যোগাযোগ স্থাপন দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করছে। তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে ডিজেলের প্রথম চালান ট্রেনে করে পার্বতীপুর পৌঁছেছে। আমাদের একটি উপকূলীয় জাহাজ প্রথমবারের মতো ভারতীয় বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত সরকার ও জনগণের ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় দুই দেশের মধ্যে স্থাপিত বন্ধুত্ব সময়ের পরিক্রমায় আরো জোরদার হয়েছে। তিনি ভারতের জনগণ এবং সরকারকে হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা জানান।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশ ও ত্রিপুরা ঐতিহ্যগতভাবে একটি বিশেষ সম্পর্ক লালন করে। এই প্রকল্পগুলো ওই বিশেষ সম্পর্কতে একটি অনন্য মাত্রা যোগ করেছে এবং সেগুলো দুই দেশের জন্যই লাভজনক (উইন-উইন) অংশীদারির প্রতীক

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/24-03-2016/মইনুল হোসেন

Tags: