ব্যথা কমানোর জন্য পেইনকিলার বিশ্বব্যাপী প্রচলিত সবচেয়ে সহজ চিকিৎসা। প্রতিদিন প্রতি ১০ জনে একজন ব্যক্তি নানা কারণে ব্যথার শিকার হন এবং তাদের অনেকেই পেইনকিলারের দ্বারস্থ হন। যদিও এটিই ব্যথা কমানোর একমাত্র উপায় নয়। আরও বহু উপায়ে ব্যথা কমানো যায়। এ লেখায় রয়েছে তেমন কিছু উপায়। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
পেইনকিলার বর্জন করুন
মাত্রাতিরিক্ত পেইনকিলার কোনোভাবেই ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ পেইনকিলারের অপব্যবহারের কারণে বহু মানুষ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন। তাদের অনেকেই এ কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি হন। পেইনকিলার মূলত ব্যথার অনুভূতি মস্তিষ্কে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে রয়েছে ওপিওইড পেইনকিলার। এটি মস্তিষ্ক, পরিপাকতন্ত্র, স্পাইনাল কর্ড ও দেহের অন্যান্য এলাকায় কাজ করে। এ ধরনের ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে পেইনকিলার বাদ দিয়ে বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খুব জরুরি না হলে পেইনকিলার এড়িয়ে চলা উচিত। পেইনকিলার ছাড়াই ব্যথা নিরাময়ের উপায় প্রসার অত্যন্ত জরুরি বিষয়।
প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন
পেইনকিলার নয় এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন। এ ওষুধগুলো ব্যাক পেইন ও আথ্রাইটিসের মতো রোগ নিরাময়েও কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক গাইডলাইনে ব্যাক পেইন ও আথ্রাইটিসের ব্যথাতেও আগে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যথা নিরাময়ে চিকিৎসকদের পেইনকিলারের বদলে ফিজিওথেরাপি, শারীরিক অনুশীলনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য যেসব ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে সেসব ব্যথার জন্য ওপিওয়েডস শুধু তিন দিনের জন্য দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধটির সবচেয়ে কম মাত্রা দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিকল্প চিকিৎসা
বিভিন্ন বিকল্প চিকিৎসায় ব্যথা-বেদনা নিরাময় করা সম্ভব। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মেডিটেশন ও এ ধরনের আরও কিছু উপায়। এতে দেহের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক পদ্ধতি কার্যকর করা সম্ভব হয়। এতে ব্যথার অনুভূতি মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রাকৃতিকভাবেই বাধা পায়। এ ধরনের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক পদ্ধতি গত সপ্তাহের জার্নাল অব নিউরোসায়েন্সে তুলে ধরা হয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, একাগ্রচিত্তে মেডিটেশনে মস্তিষ্ক ও শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি করা যায়। এতে ব্যথার অনুভূতি দূর হয়। এ ছাড়া মেডিটেশনে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমে। এতে জীবনযাপনের মানও বৃদ্ধি পায়। ব্যথানাশক ওষুধ যে পদ্ধতিতে ব্যথা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দেয়, সঠিক উপায়ে মেডিটেশনের মাধ্যমেও ব্যথা একইভাবে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দেয়।
ঠাণ্ডা ও গরম পদ্ধতি
ব্যথা কমাতে একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায় হলো গরম ও ঠাণ্ডা প্রয়োগ করা। তবে এ পদ্ধতি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম রয়েছে এগুলো মেনে চলা জরুরি। যেমন ক্রনিক ব্যথার ক্ষেত্রে গরম সেঁকা দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আঘাতের ক্ষেত্রে তা যদি এক দিনের বেশি হয়ে যায় তখন গরম সেঁকা দেওয়া যেতে পারে।
ঠাণ্ডা সেঁকা দেওয়া যায় কোনো একটি আঘাতের সূত্রপাতে। কোনো স্থানের নতুন ব্যথায় ফুলে ওঠা কিংবা আঘাত পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ঠাণ্ডা সেঁকা দেওয়া যায়। গরম সেঁকা দেওয়া যায় মাংসপেশির ব্যথায়। এটি ক্রনিক ও দীর্ঘদিন পুনরায় শুরু হওয়া ব্যথার ক্ষেত্রে দেওয়া যায়। এটি রক্তের কণাগুলোকে বৃদ্ধি করে রক্তচলাচল বাড়ায়। এতে মাংসপেশির খিঁচুনি কমে যায়। এ ছাড়া গরম সেঁকায় মাংসপেশির ফোলাভাব ও কাঠিন্য কমে যায় এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।
তবে অনেক চিকিৎসক জানান, কোথাও ব্যথা পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গরম সেঁকা দেওয়া উচিত নয়। এ সময় বরফ ব্যবহার করা যাবে। এটি পুরনো ব্যথার ক্ষেত্রে কার্যকর। গরম পানির ক্ষেত্রে তা বোতলে ভরে, হিটিং প্যাডে বা গরম তোয়ালে ভিজিয়ে প্রয়োগ করা যায়।
খেলতে গিয়ে বা দুর্ঘটনায় হঠাৎ করে কোথাও ব্যথা পেলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সে স্থান লাল বা কালো হয়ে যাওয়া প্রতিরোধে কার্যকর। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে রক্তের প্রবাহ কমিয়ে দেয় ঠাণ্ডা। এতে সে স্থানে রক্ত এসে তা ফুলিয়ে দিতে পারে না। তবে এ প্রক্রিয়া কখনোই ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি চালানো উচিত নয়। কোনো স্থানে আঘাতের পর সেখানে ১৫-২০ মিনিটের বেশি বরফ লাগিয়ে রাখলে তাতে টিস্যু ড্যামেজ হতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/27-03-2016/মইনুল হোসেন