মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- ইতিহাস গড়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করলো আফগানিস্তান। টুর্নামেন্টের বিপজ্জনক দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ রানে হারিয়ে দিলো তারা! শেষ ওভারে ১০ রান দরকার ছিল ক্যারিবিয়ানদের।
কিন্তু স্পিনার মোহাম্মদ নবি তা হতে দেননি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানরা। তবে জিততে পারেনি। ক্রিস গেইলকে ছাড়া খেলতে নামা ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে ‘আপসেট’ এর জন্ম দিল তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য সেমিফাইনালে উঠে গেছে আগেই। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন তারাই।
গেইল খেলেননি। কিন্তু ম্যাচের পর সব আফগান খেলোয়াড় ছুটে এলেন তার সাথেই ছবি তুলতে। গ্রুপ ছবি হলো গেইলকে মাঝে রেখে। স্বপ্নের তারকার দলকে হারানো তাহলে আফগানদের জন্য কতোটা বড় হতে পারে! গেইলদের ‘চ্যাম্পিয়ন্স ড্যান্স’ দিয়েই এই জয় উদযাপন করেছে আফগানরা! মজার ব্যাপার, দল হারলেও তাদের সাথে নেচেছেন গেইল! রবিবার নাগপুরে ৭ উইকেটে ১২৩ রান করেছিল আফগানিস্তান। এরপর ভয়ঙ্কর ক্যারিবিয়ানদের তারা থামিয়েছে ৮ উইকেটে ১১৭ রানে।
শেষ দিকে ম্যাচটা জমিয়ে তোলে আফগানিস্তান। ১৮ বলে ২৯ রান দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির সাথে উইকেটে আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু রাসেল (৭) রান আউট হলেন। সামিউল্লা শেনওয়ারি ওই ওভারে দিলেন ৪ রান। ১২ বলে ২৫ রান লাগবে ক্যারিয়ানদের। গুলবাদিন নাইবকে কার্লোস ব্রাথওয়েট ছক্কা মারলেন। কিন্তু এরপর স্যামি (৬) আউট। ব্রাথওয়েট আরেক ছক্কায় শেষ ওভারে ১০ রানের লক্ষ্য নিলেন। কিন্তু আফগানদের সেরা স্পিনার মোহাম্মদ নবি পাল্টে দিলেন চিত্র। প্রথম দুই বল ডট। পরের বলে মারলেন ব্রাথওয়েট। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচ নিয়ে আহত হয়ে ডাগ আউটে গেলেন নাজিবুল্লা জারদান (ম্যান অব দ্য ম্যাচও তিনি)। ম্যাচটা আফগানদের হাতে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে ১০ রানের সময় অবসর নেয়া আন্দ্রে ফ্লেচার খোড়াতে খোড়াতে এলেন। স্যামুয়েল বদ্রি ১ রান নিয়ে তাকে স্ট্রাইক দিলেন। ২ বলে ৯ রান চাই। কিন্তু পারলেন না ফ্লেচার। ১ রান। শেষ বলে ৮ চাই! আফগানরা এরপর মাতলো ইতিহাস গড়ার উল্লাসে। এই প্রথম বিশ্বকাপে কোনো টেস্ট খেলা দেশকে হারালো তারা। এর আগে বিশ্বকাপের বাইরে টেস্ট খেলা দল বলতে কেবল জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে। তার মানে আফগানিস্তানের ইতিহাসের সেরা জয় এটা। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সাবেক চ্যাম্পিয়ন ও এবারের শিরোপা প্রত্যাশীদেরই হারিয়ে দিলো যে তারা!
আফগানদের বোলিং হয়েছে চমৎকার। স্পিনার আমির হামজার ৪ ওভারে ৯ রানে ১ উইকেট চোখ কাড়া। টিনেজার লেগি রাশিদ খানের ২৬ রানে ২ ও নবিরও ২৬ রানে ২ উইকেট ম্যাচ জেতায় অন্যতম সহায়ক। শেনওয়ারি দিয়েছেন ২২ রান। ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস সর্বোচ্চ ২৮ রান ডোয়াইন ব্রাভোর। জনসন চার্লস ২২, দিনেশ রামদিন ১৮ ও ব্রাথওয়েট ১৩ রান করেছেন। স্যামিও স্বীকার করলেন, এই ব্যাটিং ব্যর্থতা হতাশার।
নাগপুর স্পিনের জন্য ভালো। সেখানে আগে ব্যাট করেছে আফগানরা। লেগ স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রি শুরু থেকে তা প্রমাণ করে গেলেন। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের পর ষষ্ঠ ওভারেও উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২২ বলে ২৪ রান করা বিপজ্জনক মোহাম্মদ শাহজাদ তার শিকার। তৃতীয় উইকেটটিও তার। অধিনায়ক আসগার স্তানিকজাই (১৬) ক্যাচ দিয়েছেন। বদ্রি ৪ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইনিংসের সফল বোলার।
বাঁ হাতি স্পিনার সুলিমান বেনও চমৎকার। ৪ ওভারে ১৮ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। পেসার আন্দ্রে রাসেল ২৩ রানে শিকার করেছেন ২ উইকেট। ৫৬ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। সেখান থেকে তাদের টেনে নিয়ে গেছে মোহাম্মদ নবি ও নাজিবুল্লা জারদানের ৩৪ রানের জুটি। নবি যদিও ৯ রান করেছেন মাত্র। নাজিবুল্লা ইনিংসের সর্বোচ্চ রানের মালিক। ৪০ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত থেকেছেন। শেষে তার নেয়া ক্যাচেই ম্যাচের ভাগ্যটা নির্ধারিত হয়ে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/27-03-2016/মইনুল হোসেন