কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে হোটেল কর্মচারী মতিউর রহমানকে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত হোটেল মালিক মো. হারিছ মিয়া গ্রেপ্তারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাদ্দাম হোসেন হারিছ মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার জিমটিবাজার থেকে অভিযুক্ত হারিছ মিয়াকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
পিবিআই জানায়, প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও হারিছ মিয়ার বিধবা বোনকে বিয়ে না করে অন্য মহিলাকে বিয়ে করা ও পাওনা টাকা নিয়ে নয়-ছয় করার কারণে তার প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে মতিউরকে দায়ের আঘাতে কুপিয়ে হত্যা করেন হারিছ। এরপর তিনি লাশ দুই টুকরা করে দুই জায়গায় ফেলে রাখেন।
গ্রেফতার হারিছ মিয়া (৫০) কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের। সুলতাননগর গ্রামের মৃত আব্দুল হাফিজের ছেলে।
নিহত মতিউর রহমান একই গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে।
গত ২৪ মে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মতিউর রহমান। তিন দিন পর ২৭ মে গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে তার অর্ধেক লাশ (মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত) উদ্ধার করে পুলিশ। এর পাঁচ দিন পর ১ জুন সন্ধ্যার দিকে খোঁজারগাঁও এলাকার বড় হাওর থেকে ভাসমান অবস্থায় তার শরীরের কোমর থেকে বাকি অংশ উদ্ধার করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মতিউরের ছেলে রমজান মিয়া বাদী হয়ে দুর্বৃত্তদের আসামি করে গত ২৭ মে করিমগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটির তদন্তভার কিশোরগঞ্জ পিবিআইয়ের ওপর ন্যস্ত হয়।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন হারিছ।
হারিছকে উদ্ধৃত করে এই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানান, হারিছ মিয়ার হোটেলের কর্মচারী ছিলেন মতিউর রহমান। কর্মচারী হলেও তারা ছিলেন বন্ধুর মতো। পাঁচ-ছয় বছর আগে মতিউরের স্ত্রী মারা যান। এরপর থেকে মরিচখালি বাজারের ওই হোটেলেই রাতযাপন করতেন মতি। হারিছের বিধবা বোনকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে গত ২১ মে মতিউর রহমান দড়ি গাঙ্গাটিয়া গ্রামের মৃত কছুম আলীর মেয়ে দোলেনা নামে এক মধ্যবয়সী নারীকে বিয়ে করেন। এতে বন্ধুর ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন হারিছ। তাছাড়া এর আগে তার কাছ থেকে দু‘দফায় মেয়ের জামাইকে বিদেশ পাঠানো ও ফার্নিচার কিনে দেয়ার কথা বলে এক লাখ টাকা ঋণ নেন মতিউর। কিন্তু পরে বলেন, এ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তার কথা বিশ্বাস করেননি হারিছ। এসব ক্ষোভ ও অবিশ্বাস থেকে মতিউরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
গত ২৪ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মতিউর মরিচখালি বাজারে গেলে হারিছ তাকে নিয়ে পাউরুটি ও কেক খায়। এ সময় কৌশলে ওই খাদ্যের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে হারিছ তার হোটেলে ঘুমন্ত মতিউরকে ধারালো দায়ের কোপে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এরপর একটি অংশ স্থানীয় কবরস্থানে ও আরেকটি অংশ বস্তায় ভরে হাওরে ফেলে পালিয়ে যান।