করোনার সংক্রমণ আবারও ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্তের হার। গবেষকরা বলছেন, এবারের সংক্রমণের কারণ ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ-ফোর এবং বিএ-ফাইভ। প্রাথমিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সংক্রমণশীল। শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলেও এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। তবে, টিকার অ্যান্টিবডি অনেকটাই কমায় মৃত্যুহার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১২ কোটি ৯০ লাখের বেশি প্রথম ডোজের বিপরীতে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ মানুষ। এতদিনে বুস্টার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২ কোটি ৯১ লাখ মানুষ। বুস্টার ডোজ কম নেওয়ার কারণে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কা।
নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্দিষ্ট একটা সময় পর কমে আসার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে। এ অবস্থায় যারা এখনও প্রথম, দ্বিতীয় বা বুস্টার ডোজ নেননি, সেসব মানুষকে দ্রুত টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্বর, ঠান্ডা, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত কোভিড পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তবে, দ্রুতই বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। এক মাস আগেও বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম নিয়ে রোগীর অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। অথচ, গত ১০-১২ দিন ধরে কোভিড পরীক্ষা করাতে আসা মানুষের চাপ সামাল দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। হঠাৎই বেড়ে গেছে জ্বর, ঠান্ডা, কাশিসহ নানা উপসর্গে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা।
একদিকে বাড়ছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা, পাশাপাশি সম্প্রতি দেশে বেড়েই চলেছে কোভিড পজিটিভ রোগী। দীর্ঘ একটা সময় শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে থাকলেও বর্তমানে তা ছাড়িয়েছে ১৫ শতাংশ। তবে, আশার কথা হচ্ছে, যে হারে শনাক্ত বাড়ছে, সে তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক কম।
বর্তমানে সংক্রমণের হার বাড়া প্রসঙ্গে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘ওমিক্রনের সাব- ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই সংক্রমণশীল। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ১০ জন সংক্রমিত হতে পারেন। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, আমরা প্রচলিত যে টিকা নিচ্ছি, সেটাকে অতিক্রম করে আক্রান্ত করছে সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিএ-ফোর এবং বিএ-ফাইভ। তার মানে, করোনার টিকাগুলো সাব-ভ্যারিয়েন্টের ওপর কোনো কাজই করে না।’
সংক্রমণ বাড়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর। তিনি বলেন, ‘সবাইকে মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। যারা টিকা নেননি, তারা অবশ্যই টিকা নেবেন। যারা একটি টিকা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজ নেবেন। আর যারা দুই ডোজ নিয়েছেন, তারা অবশ্যই বুস্টার ডোজ নেবেন। সামাজিক দূরত্বও মেনে চলতে হবে।’
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তাফা আজিজ সুমন বলেছেন, ‘যে হারে মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে, যদিও সে অনুযায়ী মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না; কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই, করোনার যে ঢেউ, সেটাকে সবারই বিবেচনায় নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে সবাইকে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯ হাজার ১৬০ জনে। শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১০৫ জন করোনা রোগী। এ পর্যন্ত মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এ পর্যন্ত করোনা শনাক্তের গড় হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। করোনায় মৃত্যু হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।