অ্যাটাক ড্রোন তৈরিতে বিশ্বব্যাপী চমক লাগিয়েছে তুরস্ক।এবার বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হতে যাচ্ছে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই দেশের তৈরি অ্যাটাক ড্রোন ও আধুনিক নানা সমরাস্ত্র। মনুষ্যবিহীন এ আকাশযান কেনার জন্য তুরস্কের সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তি করা হয়েছে।
চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে ড্রোন ব্যবহার করে রুশ বাহিনীকে বিপাকে ফেলেছে, তুরস্কের তৈরি সেই বাইরাকটার টিবি-২ অ্যাটাক ড্রোনই কিনছে বাংলাদেশ।
এ ড্রোন কেনার জন্য বাংলাদেশ সম্প্রতি চুক্তি করেছে বলে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ড্রোন বাইরাকটার টিবি২–এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাইকার টেকনোলজির সঙ্গে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সম্প্রতি চুক্তি সই করেছে।
বাইরাকটার টিবি২ ড্রোন এর আগে লিবিয়া, সিরিয়া এবং আজারবাইজান–আর্মেনিয়ার যুদ্ধে সফল ব্যবহারের কারণে আলোচনায় এসেছিল। সর্বশেষ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে এ ড্রোনের ভূমিকা সমর বিশ্লেষকদের নজর কেড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে থাকে এমন একটি ওয়েবসাইট মিডলইস্টআইয়ের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাইরাকটার টিবি২ ড্রোনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি এই ড্রোন রাশিয়ার ভূখণ্ডে গিয়ে দুটি তেলের ডিপোতে হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলা রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এমনকি রাশিয়ার সামরিক যান, ট্যাংক এবং আর্টিলারী সিস্টেম ধ্বংসে সরাসরি ব্যবহার করা হয়েছে এই কালজয়ী কমব্যাট ড্রোনটি।
মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এমন একটি ওয়েবসাইট আল মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রতিষ্ঠান বাইকার টেকনোলজি সাধারণত ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৯৫ কোটি টাকায় প্রতিটি বাইরাকটার টিবি২ বিক্রি করে থাকে। এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক বাইরাকটার টিবি২ ড্রোন সরবরাহ করেছে তুরস্কের বাইকার টেকনোলজি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জামাতা বাইকার টেকনোলজির প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা সেলুক বাইরাকটার সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা ও উন্নত প্রযুক্তির গোলা ছোড়ার পাশাপাশি আকাশে সাঁজোয়া যান হিসেবে ঘুরে বেড়ানোর সক্ষমতা আছে বাইরাকটার টিবি২–ড্রোন এর। এটি সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় একাধারে ২৭ ঘন্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার সক্ষমতা রাখে। এর রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটারের বেশী এবং গতি প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার। এটি ১৫০ কেজি ওজন পর্যন্ত অস্ত্র ও মিসাইল বহন করতে পারে। এরমধ্যে গাইডেড বোম্ব, লং রেঞ্জ এন্টি ট্যাংক মিসাইল, গাইডেড মর্টার, লেজার গাইডেড রকেট উল্লেখযোগ্য।
বাইকার টেকনোলজির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১৪টি দেশ বাইরাকটার টিবি২ কিনেছে। আরও ১৬টি দেশ ড্রোনটি কিনতে যাচ্ছে।
মূলত যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার ক্ষেত্রে ড্রোনের এ ভূমিকার কারণে বিশ্বের সব দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।
এর আগে বাংলাদেশ ও তুরষ্কের মধ্যে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতার আওতায় তুরস্ক নির্মিত মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যান, সাঁজোয়া যান এবং বহুমাত্রিক রকেট প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনেছে বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশের কাছে স্বয়ংক্রিয় কামানের গোলা বিক্রির বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের কাছে সামরিক হেলিকপ্টার ও ট্যাংক বিক্রিতে আগ্রহী তুরস্ক।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে বিরাট ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মিয়ানমারের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াবে এই বায়রাকটার টিবি-টু অ্যাটাক ড্রোন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুনঃ MKN Bangla
ভিডিও লিংকঃ তুরস্কের সেই পৃথিবী বিখ্যাত অ্যাটাক ড্রোন কিনছে বাংলাদেশ
ভিডিওঃ