বহুল আলোচিত টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন (২১), ডাকাত দলের সদস্য আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), আব্দুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)। রোববার রাতে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাবের একাধিক দল।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি মহাসড়কে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত দুই আগস্ট রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস টাঙ্গাইল অতিক্রম করার সময় ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১২ ও র্যাব-১৪ এর আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ওই ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন মিয়া। তিনি অপর ডাকাত রাজা মিয়াকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাজা দলের অন্যান্য ডাকাতদের সংঘটিত করার কথা বলে। রতনের নেতৃত্বে গত ২ আগস্ট গাজীপুরের জিরানী বাজার এলাকায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাস ডাকাতির পরিকল্পনা হয়।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও ১টি ক্ষুর কিনে। ডাকাতিতে অংশ নেয় ১৩ ডাকাত।
গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির রাতে রাজাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা রাত ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌছাঁলে বাসটিকে থামার সংকেত দেয়।
যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন বাসটিতে উঠে। পরবর্তীতে আরও দুই দফায় ডাকাত চক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে আরোহন করে। বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করার পর রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে এবং রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদেরকে হাত মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে মুখে মুখোশ পড়িয়ে মুখমন্ডল ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।
পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় গ্রেপ্তারকৃত রতন গাড়ি চালনার সময় লুটকৃত মালামাল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডার কারণে রতন পিছনে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুটি ও বালুর সাথে বাসের সংঘর্ষ হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একপাশে হেলে পড়ে। তখন ডাকাতদলের সবাই লুটকৃত মালামালসহ বাস থেকে নেমে যায়।
ডাকাতির ঘটনার পর রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুন্ঠিত মালামাল ভাগ-বাটোয়ারা করে সবাই বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ ও পরিচয় আগে থেকেই। তাদের মধ্যে অনেকের পরিচয় জেলখানাতেই। জেল থেকে বেড়িয়ে আবার ডাকাতিতে অংশ নিচ্ছেন।
বাসে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাসে একজন নারী যাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জেনেছি। বাস ডাকাতিতে জড়িতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে তারা একাধিক নারীকে শ্লীনতাহানি করেছেন। তবে ধর্ষণের ঘটনা একটিই। ডাকাতির পূর্ব পরিকল্পনা থাকলেও তাদের ধর্ষণ-শ্লীনতাহানির পরিকল্পনা ছিল না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মহাসড়কে যাত্রীবাহী গণপরিহনসহ অন্যান্য পরিবহনে ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়াতে পারি না। অবশ্যই আমাদের দায়-দায়িত্ব আছে। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদেরও রয়েছে দায়। কারণ মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে রাতে। এর নেপথ্যে কিছু কারণ উঠে আসছে। হাইওয়েতে যত্রতত্র যাত্রী উঠানো, কাউন্টারে যাত্রী না তোলা, টিকিট না বিক্রি করেও যাত্রী তোলার সুযোগে ডাকাত দল বাসে উঠছে সংঘবদ্ধভাবে।