রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকার চাপা দেওয়ার সময় ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী রাকিব হোসেন (২৩)। আর তাকে বাইরে থেকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন ক্রেনচালক আল আমিন।
র্যাব বলছে, রাকিব হোসেনের ক্রেন চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আবার মূল চালক আল আমিনের হালকা যান চালানোর লাইসেন্স থাকলেও ভারী যানের লাইসেন্স ছিল না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, ক্রেনের মূল চালক আল আমিনের হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দুই-তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। পরে ২০২২ সালের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন।
আর রাকিব তিন মাস আগে এই প্রকল্পে ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার ক্রেন চালনার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না, বলেন র্যাবের এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর আল আমিন ও রাকিব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০ জন হলেন-মো. আল আমিন হোসেন হৃদয়, সহকারী রাকিব হোসেন, দুর্ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান মো. রুবেল, মো. আফরোজ মিয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. জুলফিকার আলী শাহ, হেভি ইকুইপমেন্ট সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ইফকন বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. ইফতেখার হোসেন, হেড অব অপারেশন মো. আজহারুল ইসলাম মিঠু, ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন তুষার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন মৃধা ও মো. মঞ্জুর ইসলাম।
তাদের রাজধানীর জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, কালশী, সাভার এবং গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে এ ঘটনায় সোমবার রাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় ক্রেনের চালক ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতদের।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জসিমউদ্দীন মোড় সংলগ্ন সড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্থাপনা প্রকল্পের একটি গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া ছাড়া পাঁচ আরোহী নিহত হন।
নিহতরা হলেন- হৃদয়ের বাবা আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা আক্তার (৩৮), কনে রিয়ার খালা ঝর্না আক্তার (২৭), তার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (৪)।