রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। এর আগেও রাশিয়া অপরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন বাংলাদেশের তেল পরিশোধনের সক্ষমতা না থাকায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিশোধিত তেল বিক্রির এই প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনায় প্রধান বাধা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের গ্রিন সিগন্যাল না পেলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশ ৩৫-৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে। তাদের অখুশি করে রাশিয়া থেকে তেল কিনলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রফতানির ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
রাশিয়ার ‘হিউজটন’ নামে একটি কোম্পানি গত সপ্তাহে পরিশোধিত ডিজেল বিক্রির প্রস্তাব জমা দেয় মন্ত্রণালয়ে। প্রতি ব্যারেল ৫৭ টাকা দর দিয়েছে, এতে প্রতি লিটারের দাম পড়বে ৪০ টাকার নিচে। তেল জাহাজীকরণ করা হবে দুবাই থেকে। এ ছাড়া প্রতি টন রাশান ডিজেল ৪২৫ ইউএস ডলারে সরবরাহ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৪৩ ডলার মাত্র। ডলার ১১০ টাকা হিসেবে ধরলে প্রতি লিটারের আমদানি খরচ পড়বে ৪০ টাকার নিচে। প্রতিষ্ঠানটি এই দরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত তেল পৌঁছে দেবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানি করতে ১২৫ ডলারের মতো খরচ পড়ছে। অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল আনতেও ৯০ ডলার খরচ পড়ছে। অর্থাৎ অপরিশোধিত ক্রুডের চেয়েও অনেক কম দামে ডিজেল কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
মন্ত্রণালয় বলছে,প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই রাশিয়ার তেল কেনার উপায় খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে সময় লাগবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার বিষয় আছে। শুধু রাশিয়া নয়, রাশিয়ার তেল অন্য দেশের মাধ্যমে বিক্রির প্রস্তাবও আসছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। রাশিয়া থেকে সরাসরি তেল বাংলাদেশে আসবে, নাকি অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে আসবে, তারও রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনলে হয়তো আমাদের ৩০-৪০ কোটি ডলারের মতো সাশ্রয় হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ অখুশি হলে ৩৫-৪০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তারা না চাইলে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল আমদানি করছে। তার কারণ ভারত দেশ হিসেবে অনেক বড়। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা চলে না। মজার ব্যাপার হলো,রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইউরোপের অনেক দেশ এবং খোদ যুক্তরাষ্ট্রই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
তাই, বাংলাদেশকে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্রিন সিগন্যাল নিয়েই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলঃ MKN Bangla
ভিডিও লিংকঃ রাশিয়া থেকে কমদামে তেল কিনতে বাধা কোথায়? (ভিডিও)