করোনা ও যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের মানুষকে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে কিন্তু আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে। পয়সা দিয়ে খাবার কেনা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের খাবার নিজেদের উৎপাদন করতে হবে। ছাত্রলীগ যেমন ধান কাটায় সাহায্য করেছে, ধান রোপণেও সাহায্য করতে হবে।
‘‘কোনও জমি ফেলে রাখা যাবে না। একটি ফলের গাছ লাগালেও লাগাতে হবে। জাতির পিতা যেটা বলেছেন, ‘আমার মাটি আছে মানুষ আছে সেটা দিয়েই আমি দেশ গড়বো’। কাজেই সেটা আমরা করতে পারবো, সেই বিশ্বাস আমার আছে।”
তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনেতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেককে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে পানির জন্য হাহাকার। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপ ভয়াবহ অবস্থা অর্থনীতির। আমরা আগে থেকে যদি সাবধানে থাকি আমরা কিন্তু আমাদের অবস্থা সামাল দিতে পারবো।
এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিজেদের সাশ্রয়ী হতে এবং অন্যকেও সাশ্রয়ী হতে উৎসাহিত করতে কাজ করার নির্দেশ দেন।
দল ভারী করতে ছাত্রলীগে খারাপ কাউকে না আনতে সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক অনেক কথা লেখা হয়। এতো বড় একটা সংগঠন, তার মধ্যে কিছু কিছু তো…আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই ভেতরে ঢুকে যায়। ঢুকে নিজেরাই গণ্ডগোল করে। বদনামটা ছাত্রলীগের ওপর পড়ে।’
‘ছাত্রলীগকেও সংগঠন করার সময় ওই গ্রুপ বাড়ানোর জন্য এরকম আলতু-ফালতু লোক দলে ঢুকাবে না। তাতে নিজেদের বদনাম, দলের বদনাম, দেশের বদনাম। কারণ পিছে তো আমাদের লোক লেগেই আছে, লেগেই থাকবে। ছাত্রদল কতো অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কথা নেই, কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলেই বড় নিউজ। এজন্য নিজেদের ঠিক থাকতে হবে।’
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আগে লেখাপড়া করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আমি দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে। তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আজকের প্রজন্ম ও পরবর্তী প্রজন্ম নিজেদেরকে প্রস্তুত করবে। কারণ এখন তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগ, এরই সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষায়-দীক্ষায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
‘কারণ দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে, জ্ঞানের প্রয়োজন আছে, ইতিহাস জানার প্রয়োজন আছে এবং দূরদর্শী হতে হবে; এই দেশকে আমরা কী করবো। এটা না থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে না।’
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আসতে তার সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে ৭৫-এ উন্নীত করতে পেরেছি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাদের হাতে কাগজ-কলম-বই তুলে দিলাম যে, আগে লেখাপড়া করতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া কেউ জাতিকে সেবা দিতে পারে না। শিক্ষা আর জ্ঞান…জ্ঞানের আলো ছাড়া কাজ হবে কীভাবে। আমরা বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা করে দিয়েছি।
এসময় করোনাকালে ধান কাটতে শ্রমিক সংকটের সময়ে কৃষকের পাশে থেকে ধান কেটে দেওয়া এবং মানুষের পাশে থাকার জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এভাবে মানবতার সেবা করে যেতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস’ এটা জাতির পিতা বলে গেছেন। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য, আমাদের হাতেই তাকে জীবনটা দিতে হলো। যেটি তিনি হয়তো কখনও ভাবতেই পারেননি। আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে সেই চেনা মুখ ঘাতকের বেশে তখন তার মনে কী হয়েছিল আমি জানি না। কিন্তু আমার মাকে যখন বললো, আপনি চলেন আমাদের সাথে। তখন আমার মা কিন্তু জীবন ভিক্ষা চায়নি। শুধু বলেছিলেন, ওনাকে যখন হত্যা করেছে আমাকেও করো। আমি তোমাদের সাথে কোথাও যাবো না। ওই ধরনের একটা মুহূর্ত, এতো অস্ত্রধারী; সাধারণত মানুষ জীবন ভিক্ষা চায়, কাকুতি-মিনতি করে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মা তার যে সাহস-ত্যাগ…তিনি কিন্তু ভিক্ষা চাননি। ‘তোরা ওনাকে কেন মারলি’- মায়ের সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল বুলেট দিয়ে। এরপর একে একে সবাইকে মারলো। মায়ের লাশ, বাবার লাশ পেরিয়ে রাসেল যখন চিৎকার করে কাঁদছিল তখন তাকে গুলি করে হত্যা করলো।
বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানো জাতির পিতার লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমার সেটাই লক্ষ্য। ৬ বছর আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান আমাকে আসতে দিতে চায়নি, বাধা দিয়েছে। আবার যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ফিরে আসলাম তখন আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতেও ঢুকতে দেয়নি। আমি যে মিলাদ পড়বো, নামাজ পড়বো- সেই সুযোগও জিয়াউর রহমান আমাকে দেয়নি।
অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তত বাংলাদেশের উন্নয়ন আমরা করতে পেরেছি। জাতির পিতা অল্প সময়ে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশে উন্নয়ন করেছিলেন। সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হয়েছি। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আমি পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি। ২০৪২ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ কেমন হবে, ২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে; সেই ডেল্টা প্লান করে দিয়েছি। কাজেই আগামীতে যারা আসবে নিশ্চয় এটা অনুসরণ করলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।