এই প্রথম ঘটবে ঘটনাটা। ফাইনালে যে দলই জিতুক তারা দ্বিতীয়বারের মতো হবে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ওয়ানডে ক্রিকেটে দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডটা বহুকাল ধরে রেখেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটেও তাই হবে নাকি? নাকি নতুন প্রজন্মের ইংল্যান্ড দল আরেকবার ক্রিকেটের তীর্থে ফেরাবে টি-টোয়েন্টি শিরোপাকে? জবাব মিলবে রবিবারের ফাইনালে। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে সাতটায় কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের মহারণে।
এবারের বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডকে কেউ ফেভারিট বলেনি। কিন্তু তারা ফাইনালে উঠেছে ফেবারিটের মতো খেলেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলছে তার সাথে টক্কর দেয়ার মতো দল কিন্তু এবারের আসরে কেবল তারাই ছিল। একটি উদাহরণ দিতে হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২৩২ রানের টার্গেট জয় করার রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে তারা। আর ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ২৩০ রানের টার্গেট তাড়া করে জিতেছে। যেটা টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। কিন্তু বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। বোঝাই যাচ্ছে দুই দলে কেমন ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানের ছড়াছড়ি!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে। ইংলিশরা ১৮২ রান করার পরও ক্যারিবিয়ানরা হেসেখেলে জিতেছে। ক্রিস গেইলের ৪৭ বলের সেঞ্চুরি সেই ম্যাচে ইংলিশ স্বপ্নের হন্তারক। আবার লেন্ডল সিমন্সের অপরাজিত ৮২, আন্দ্রে রাসেলের ঝড়ে সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভারতকেই হারিয়ে দিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। ১৯৩ রানের টার্গেট তাড়া করে ৭ উইকেটের জয় তাদের।
ক্যারিবিয়ানরা একটু বেশি চার-ছক্কা মারে। পাওয়ার হিটিংয়ে ওস্তাদ। কিন্তু ইংলিশরা এবার পিছিয়ে নেই। এই আসরে ক্যালিপসো কিংদের ছক্কা সবার চেয়ে বেশি। ৩৬টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ছক্কা ৩৪টি। আবার বাউন্ডারি মারার ক্ষেত্রে কিন্তু এগিয়ে ইংল্যান্ডই। তারা মেরেছে ৭৮টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬১টি।
টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তবু তুলনায় একটু বেশি ভয়ানকই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেড টু হেডে ৯-৪ এ এগিয়ে তারা। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই দলের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ানদের ৪-০ তে জয়ের রেকর্ড। তার মানে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কখনোই জেতার রেকর্ড নেই ইংলিশদের!
দুটি দলের মধ্যে কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন? ২০১২ সালের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের গভীরতা খুব। দুই স্পিনার স্যামুয়েল বদ্রি ও সুলিমান বেনকে বাদ দিলে সবাই ব্যাটসম্যান। অল রাউন্ডারই চারজন। যাদের প্রত্যেকেই ম্যাচ জেতাতে জানেন। বিশ্বের নানা প্রান্তের টি-টোয়েন্টি লিগে এর তিনের প্রবল আকর্ষণ। আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্রাভো ও ড্যারেন স্যামির সাথে আছেন তরুণ কার্লোস ব্রাথওয়েট। ৫ ম্যাচ শেষ। কিন্তু এবারের আসরে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি মাত্র ১১ বল খেলেছেন। আর ১২ বল করেছেন! সুযোগ পাচ্ছেন কই! ফাস্ট বোলারদের পাশে স্পিনাররাও চমৎকার। গেইল, জনসন চার্লস, সিমন্স, মারলন স্যামুয়েলসরা দিতে জানেন বিস্ফোরক শুরু।
২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলটা এবারের বিশ্বকাপে জ্বলে উঠেছে অন্যরকমভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জো রুটের ৮৩ কিংবা সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জ্যাসন রয়ের ৭৮ তাদের পারফরম্যান্সের হাইলাইট। অধিনায়ক এউইন মরগ্যান দুটি গোল্ডেন ডাক মেরেছেন। ৫ ম্যাচে রান ৬১। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্যাট করেন। তারপরও তার অভাব বুঝতে দেননি অন্যরা। অ্যালেক্স হেলস, জস বাটলার, বেন স্টোকসরা দায়িত্ব নিতে জানেন। ইংলিশদেরও দুই স্পিনার আছে। আদিল রশিদ ও মঈন আলি। পেস বোলিংয়ে ডেভিড উইলি, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম প্লাঙ্কেটের সাথে হাত লাগাতে জানেন স্টোকস। ইডেনের পিচে স্পিন ধরুক বা পেস, দুই দলের বোলিং সামলে নেয়ার ক্ষমতা রাখে।
মরগ্যান বলেছেন, ফাইনালটা স্বাভাবিক কোনো খেলা হবে না। তার মানে ক্রিকেট আমুদেরা অন্যরকম বিনোদন আশা করতেই পারেন। আর স্যামি বলছেন, তারা কেবল নিজেরাই নিজেদের হারাতে পারেন। কিন্তু শিরোপা হাতে চ্যাম্পিয়ন ড্যান্সের প্রস্তুতি যে তারা নিয়েই রেখেছেন!
সম্ভাব্য একাদশ:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ক্রিস গেইল, জনসন চার্লস, লেন্ডল সিমন্স, মারলন স্যামুয়েল, দিনেশ রামদিন, ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল, ড্যারেন স্যামি (অধিনায়ক), কার্লোস ব্রাথওয়েট, সুলিমান বেন, স্যামুয়েল বদ্রি।
ইংল্যান্ড: জ্যাসন রয়, অ্যালেক্স হেলস, জো রুট, এউইন মরগ্যান (অধিনায়ক), জস বাটলার, বেন স্টোকস, মঈন আলি, ক্রিস জর্ডান, আদিল রশিদ, ডেভিড উইলি, লিয়াম প্লাঙ্কেট।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/02-04-2016/মইনুল হোসেন