muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

ডিএনসি কর্মকর্তাকে জিম্মি করে বারে ডিবির ‘অবৈধ’ অভিযান

রাজধানীর উত্তরার গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউয়ের ‘কিংফিশার’ নামক একটি বারে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) উত্তরা সার্কেলের পরিদর্শককে জিম্মি করে অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযানের পর গোয়েন্দা পুলিশ ‘অবৈধ’ ওই বারটির নাম কিংফিশার বললেও ডিএনসি বলছে, কিংফিশার বার নয়, রেস্তোরাঁ। বারটির নাম ‘লেকভিউ রেস্টুরেন্ট’। বারটির ডিএনসি থেকে নেয়া বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। ডিবি পুলিশ যেসব মদ-বিয়ার উদ্ধার করেছে, লাইসেন্স অনুযায়ী তারা সেসব সংরক্ষণ করতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের শাহ গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ রোডের ৩৯ নম্বরে অবস্থিত লেকভিউ রেস্টুরেন্ট নামক ওই বারে অভিযান চালায় ডিবি। অভিযানকালে প্রায় ৫০০ দামি বিদেশি মদ এবং প্রায় ছয় হাজার ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। ৩৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করে ডিবি পুলিশ।

ডিএনসি বলছে, বৈধ বারে অভিযান চালাতে হলে ডিএনসির অনুমতি নিতে হয়। ডিবি পুলিশ সেটি করেনি। সেখানে ডিবি পুলিশের অভিযান চালানো শুধু আইনবহির্ভূত নয়, অভিযানের খবর পেয়ে ডিএনসি’র একজন পরিদর্শক সেখানে যাওয়ার পর ডিবি পুলিশ তাকে একটি কক্ষে জিম্মি করে রেখে। তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়।

ডিবির অভিযানকালে জিম্মি এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে হেনেস্তার শিকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) উত্তরা সার্কেলের ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই বারের (লেকভিউ রেস্তোরাঁ) লাইসেন্স আছে। গত মাসেও টিম পরিদর্শন করেছে। তাদের কাগজপত্র ঠিক আছে। ডিবির অভিযানের সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি বার ভবনে গেলে ডিবির সদস্যরা আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। আমাকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। সরকারি গাড়ি নিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের দ্বারা হেনস্তার বিষয়টি সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা ঘটনার বিবরণ শুনে লিখিতভাবে দিতে বলেছেন। আমি রোববার লিখিত আকারে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানিয়েছি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ পুলিশ, কাস্টমস, বিজিবি, কোস্টগার্ড লাইসেন্স করা প্রতিষ্ঠান ছাড়া যেকোনো মাদকের বিষয়ে অভিযান চালাতে পারে। তবে, আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স নেয়া প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালাতে পারবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, উত্তরার গরীবে নেওয়াজের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় কিংফিশার রেস্তোরাঁ অবস্থিত। লাইসেন্স অনুযায়ী ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় লেকভিউ রেস্তোরাঁ ও বার। অভিযানের পর ডিবি পুলিশ যে মামলা করেছে সেখানে জব্দ তালিকায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা। সপ্তম তলা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বার হিসেবে বৈধ লাইসেন্সধারী লেকভিউ রেস্তরাঁর পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় অভিযান চালাতে হলে অবশ্যই ডিএনসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সেটি করেনি ডিবি।

ডিএনসি’র ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বৈধ বারে অভিযান চালাতে হলে ডিএনসিকে জানানোর নিয়ম রয়েছে। অভিযানের রাতে আমাকে ফোন করা হয়। আমি বলেছি ডিজি মহোদয়কে অবহিত করার জন্য। কিন্তু তারা সেটা করেননি। সেখানে তারা অনুমতি না নিয়েই অভিযান চালিয়েছে। যা পুরোপুরি আইনের ব্যত্যয়।’

ডিএনসি’র উত্তরা সার্কেলের পরির্দশককে জিম্মি, মোবাইল কেড়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইন্সপেক্টরকে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে বলেছি। তার অভিযোগ পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে শুধু বার নয়, যেকোনো জায়গায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালাতে পারে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কারা তল্লাশি করবেন বা করবেন না। অবৈধ কোনো জায়গায় অসামাজিক কার্যকলাপ, অবৈধভাবে মদ বিক্রি এবং যেকোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ যেকোনো জায়গায় অভিযান বা তল্লাশি চালাতে পারে। আমরা সবসময় এটা করে আসছি, আমরা বড় বড় চালান ধরেছি। এছাড়া অবৈধ বারগুলোতে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।

Tags: