চরম নাটকীয়তার ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস এ জয়ে আসরটির সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল টাইগাররা।
শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের জয়ের জন্য ১৬ রান দরকার ছিল। দলের তিন পেসারের কোটা শেষ হয়ে যাওয়াতে বাধ্য হয়ে পার্টটাইম স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেনকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। যদিও মোসাদ্দেক আজ ৪ ওভারই বল করেছেন।
প্রথম বলে ১ রান দেওয়ার পর মোসাদ্দেক দ্বিতীয় বলে বিদায় করেন ক্রিস ইভান্সকে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রিচার্ড এনগারাভা যথাক্রমে ৪ ও ৬ হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন। পঞ্চম বলে ফের মোসাদ্দেক আঘাত। এবার তিনি এনগারাভাকে আউট করে বাংলাদেশের দিকে ম্যাচ নিয়ে আনেন।
কিন্তু ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত নাটক জমে থাকে। ব্লেসিং মুজারবানিকে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের স্টাম্পিংয়ে ফেরান মোসাদ্দেক। বাংলাদেশ ম্যাচ জয়ের উৎসব শুরু করে দেয়। করমর্দন করছিলেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। মাঠ থেকেও বের হয়ে যায় দুদল। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় শেষ বলে উইকেটের সামনে বল ধরেছিলেন নুরুল হাসান। স্টাম্পিংয়ের বদলে টেলিভিশন আম্পায়ার দিয়েছেন ‘নো’ বল।
হতাশ বাংলাদেশ শিবির। আশা নিয়ে ফের ব্যাটিংয়ে নামেন মুজারবানি। কিন্তু এবার শেষ বলে আর কোনো রান না হওয়ায় জয়ের খুশি নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
আজ রোববার ব্রিসবেনে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ টুতে খেলতে নামে দুদল। বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় খেলা মাঠে গড়িয়েছে। যেখানে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫০ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রানে থামে জিম্বাবুয়ে।
১৫১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদের বলে দুই ওপেনারকে হারায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তাসকিনের করা ইনিংসের তৃতীয় বলে তুলে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানে ক্যাচে পরিণত হন ওয়েসলি মাধভেরে। নিজের পরের ওভারেই আরেক ওপেনার ক্রেইগ আরভিনকে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহোনের ক্যাচ বানান তাসকিন।
মোস্তাফিজুর রহমান নিজের প্রথম ওভারেই এসে জোড়া শিকার করেন। মিল্টন শুম্বাকে (৮) বিদায় করার পর দলটির ইনফর্ম ব্যাটার সিকান্দার রাজাকে শূন্য রানে ফেরান ফিজ।
তাসকিন আহমেদের তৃতীয় শিকারে মাঠ ছেড়েছেন রেগিস চাকাভা। ১৫ রান করা এই ব্যাটারকে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের ক্যাচ বানান তাসকিন। জিম্বাবুয়ের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪২ বলে ৬৪ রান করে স্বপ্ন দেখান শন উইলিয়ামস। কিন্তু ১৯তম ওভারে বল করার পর দারুণ এক থ্রোতে এই ব্যাটারকে বিদায় করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। এছাড়া ২৫ বলে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন রায়ার্ন বার্ল। তবে শেষ ওভারের নাটকীয়তায় জয় পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। দুটি করে উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর ও মোসাদ্দেক।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব। ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকার শূন্য রানে বিদায় নেন। দ্বিতীয় ওভারে ব্লেসিং মুজারবানির বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি।
পাওয়ার প্লেতে সৌম্য সরকারের পর লিটন দাসকেও হারায় বাংলাদেশ। ব্লেসিং মুজারবানির দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। স্কুপ খেলতে গেলে বল এই ব্যাটারের ব্যাটের কোনায় গিয়ে ওপরে উঠে যায়। স্লিপে থাকা টেন্ডাই চাতারা ক্যাচ লুফে নেন।
তৃতীয় উইকেট হিসেবে সাকিব আল হাসানকে হারায় বাংলাদেশ। ১৩তম ওভারে শন উইলিয়ামসের বলে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক। ২০ বলে একটি চারে ২৩ রান করেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে তিনি ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৪ বলে ৫৪ রান তোলেন।
সাকিবের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্ত নিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। চলমান বিশ্বকাপেও এটি বাংলাদেশ দলের কোনো ব্যাটারের প্রথম ফিফটি। তবে এদিন দারুণ খেলা শান্ত ১৭তম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে মাঠ ছাড়েন। ৫৫ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৭১ রান করেন। শান্তর ফিফটির আগে বাংলাদেশ দলীয় শতক পায়।
শেষ ওভারে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রিচার্ড এনগারাভার বলে বিদায় নেন মোসাদ্দেক হোসেন (৭)। স্লিপে ক্যাচ দেন চাতারাকে। এরপর রান আউট হন নুরুল হাসান সোহান। ইনিংসের শেষ বলে ১৯ বলে ২৯ রান করা আফিফ হোসেন এলবি হন।
জিম্বাবুয়ে বোলারদের মধ্যে মুজারবানি ও এনগারাভা ২টি উইকেট নেন।