জয়পুরহাটে পাওয়ার টিলার চালক এনামুল হক হত্যা মামলার প্রায় ১৮ বছর পর বাবা-দুই ছেলেসহ চারজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া দণ্ডবিধির ২০১/৩৪ ধারার একটি অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের আরও ৫ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ নূর ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জয়পুরহাট সদর উপজেলার পন্ডিতপুর গ্রামের মৃত কুড়ানুর ছেলে রমজান আলী, তার দুই ছেলে রঞ্জু, শাহীন আলম ও একই এলাকার রেজাউলের ছেলে হান্নান। এর মধ্যে রঞ্জু পলাতক রয়েছেন। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অন্য তিন আসামি শাহাদত, জাহাঙ্গীর ও আলীমকে খালাশ দিয়েছে আদালত।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের ফরিদপুর এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে এনামুল হক ২০০৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বজরপুর এলাকায় ভগ্নিপতি আবু বকরের বাড়িতে পাওয়ার টিলার আনতে যান। সেখানে রাতের খাবার খাওয়ার পর তার ভগ্নিপতি জানান পরের দিন সকালে তিনি নিজেই পাওয়ার টিলার তার বাড়িতে পৌঁছে দিবেন। এরপর ভগ্নিপতি এনামুলকে ভাদসা বাজার পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
এদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত রমজানের বাবা আব্বাস আলী জমি বিক্রি করবে বলে এনামুলের বাবার থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু তিনি জমি দলিলও করে দেননি, টাকাও ফেরত দিচ্ছিলেন না। এই নিয়ে আসামিদের সাথে জমি নিয়ে বিবাদ ছিল এনামুলের। সেই রাতে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে এনামুলকে মারপিট করে হত্যা করে। পরের দিন (৫ ফেব্রুয়ারি) কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে এক কৃষক মাঠে কাজ করতে গিয়ে দূর থেকে দেখতে পান, চার জন লোক আলুর খেতে কিছু ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে, তবে কুয়াশা থাকায় চিনতে পারেননি তাদের। এসময় ওই কৃষক সেখানে গিয়ে এনামুল হকের মরদেহ দেখতে পান। তখন তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে পুলিশকে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় সেই দিনই নিহতের পিতা বাদী হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় সাত জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর একই বছরের ৪ মে আদালতে অভিযোগপত্র দালিখ করেন মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। এরপর স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে চার জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেন। এছাড়া তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাশ দেওয়া হয়।