কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন উপসচিব এ কে এম রেজাউল করিম। সে ঘটনার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এবার সরকার তাকে পাঠাল তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে।
রেজাউল করিমকে বিভাগীয় মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় অবসরে পাঠানো হলো। সাময়িক বরখাস্তের আগে উপসচিব পদমর্যাদায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন তিনি। তার আগে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তা ছিলেন মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ।
এ কে এম রেজাউল করিমকে অবসরে পাঠিয়ে গত সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, এ কে এম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা ধর্ষণ মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তবে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় আরেকটি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়।
পরে এ কে এম রেজাউল করিম বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। জামিনে থাকাকালে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে রুজু করা বিভাগীয় মামলায় অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী জারি করে তাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত রেজাউল করিম কর্মকর্তা লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির প্রার্থনা করেন। পরে শুনানি অনুষ্ঠিত হলে সেখানে দাখিল করা জবাব ও সরাসরি বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা শেষে বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এবং দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়।
দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে তাকে গুরুদণ্ড হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকারি কর্ম কমিশনও (পিএসসি) এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে।
জানা যায়, রেজাউল করিম রতন মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০১৭ সালে ওই কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। ওই ছাত্রীকে ‘প্রতারণার’ ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন রেজাউল। সে ধর্ষণের ভিডিও তার কাছে আছে জানিয়ে ওই ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে এক বছর ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। এ মামলা করার আগের মাসে তার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন ওই ছাত্রী। এ দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে ধানমন্ডি থানা-পুলিশ। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।