কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর হত্যা নিয়ে একের পর এক নাটক হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীতে একটি মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ন্যায়বিচার বানচাল করতেই তনুর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘উইমেন ফর গুড গভর্ন্যান্স’ অর্থাৎ সুশাসনের জন্য নারী নামের সংগঠনের আয়োজনে মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এদিকে তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গতকাল বিকেলে কুমিল্লার আদালতে দাখিল করা হয়েছে; যে প্রতিবেদনে তনুকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মো. ইব্রাহিম কুমিল্লার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়নব বেগমের আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মানববন্ধনে তনুর ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসকদের উদ্দেশে অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘একবার বলেন আঘাতের চিহ্ন নেই। ১০ দিন পর বলছেন ধর্ষণের আলামত নেই। কিভাবে তনুর মৃত্যু হলো, সেটা যদি আপনারা না-ই বলতে পারেন, তাহলে কিসের ডাক্তার আপনারা? কে আপনাদের সার্টিফিকেট দিয়েছে ডাক্তারি করার? মৃত্যুর কারণ যদি বের করতে না পারেন, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।’ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য এসব ‘পোস্টমর্টেম’ আখ্যান রচনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আয়োজক সংগঠনের সমন্বয়কারী রুবি আমাতুল্লাহ বলেন, ‘একটা জাতির মর্যাদা নির্ভর করে সে জাতি তার নারী সমাজকে কিভাবে মূল্যায়ন করে। তনু হত্যা একটা দৃষ্টান্ত, যা আমাদের সমাজ ও বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি এবং আমরা লজ্জিত।’
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের সদস্য শিউলী করিম ও ইকবাল কবির। অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম।
বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম রয়েছে। কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় তনু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে সেই সুনাম নষ্ট হবে। বক্তারা আরো বলেন, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণের যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা যেতে পারে।
মানববন্ধনে ‘তনু আমার বোন, তনু আমার কন্যা, তনু হত্যার বিচার চাই’, ‘সাজানো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মানি না, মানব না’, প্রভৃতি লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর তনুর লাশ পাওয়া যায়। তাঁর বাবা ইয়ার হোসেন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী। এ ঘটনার মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) তদন্ত করে। এরপর এ মামলা কুমিল্লা সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। এরই মধ্যে ঢাকা সিআইডির সিনিয়র পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দকে প্রধান করে ছয় সদস্যের তদন্ত সহায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্র জানায়, সিআইডির কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খানসহ একটি প্রতিনিধিদল এখনো ঢাকায় অবস্থান করছে। তারা মামলার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কামাদা প্রসাদ সাহার কাছে তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না, তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে কিছু সময় লাগবে। তাই এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/07-04-2016/মইনুল হোসেন