মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় আপিল বিভাগের রায় রিভিউ বা পুনর্বিবেচনার জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে এ মামলায় দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে পুনরায় বিচারের আদেশ বহাল রইল।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ গতকাল রবিবার রিভিউ আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে আদেশ দেন। আদালতে মায়ার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
গতকাল আদেশ হওয়ার পর অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এ আদেশের ফলে মায়ার করা আপিলের ওপর পুনরায় হাইকোর্টে শুনানি হবে। তিনি বলেন, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত কোর্ট বন্ধ থাকবে। এ কারণে আদালত খোলার পর ওই আপিলের ওপর হাইকোর্টে শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মায়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টে পুনরায় শুনানি করতে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিলেন তা রিভিউ চেয়ে আবেদন দাখিল করা হয়েছিল। এ আবেদন আমরা ফিরিয়ে নিয়েছি। এ কারণে আদালত উত্থাপিত হয়নি মর্মে আমাদের আবেদনটি খারিজ করেছেন। এই আদেশের ফলে হাইকোর্টে পুনরায় শুনানি হবে।’ রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ায় তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। এখানে সাজা বহাল থাকা বা না থাকার প্রশ্ন জড়িত নয়। হাইকোর্টে মায়ার আপিল বিচারাধীন। তিনি জামিনে আছেন। তাই সাজা বহাল থাকার প্রশ্ন আসতে পারে না। নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যে আপিল করেছিলেন তার ওপরই পুনরায় শুনানি হবে।’
আপিল বিভাগের আদেশের পর গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে মায়া বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই এ বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানা আয় বহির্ভূতভাবে ছয় কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার ৪১৫ টাকার সম্পদ অর্জন ও পাঁচ কোটি আট লাখ ৬৫ হাজার ১৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত মায়াকে ১৩ বছর কারাদণ্ড, পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করে রায় দেন। রায়ে মায়ার প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। খালাস দেওয়া হয় মায়ার স্ত্রী, দুই ছেলে ও পুত্রবধূকে। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন মায়া। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্ট মায়াকে খালাস দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১৫ সালের ১৪ জুন রায় দেন। রায়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হলেও পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাঁর জামিন আদেশ বহাল রাখা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে সম্পদের হিসাব চেয়ে মায়াকে নোটিশ দিয়েছিল দুদক। দুদকের নোটিশ পেয়ে মায়া তিন কোটি ৩৯ হাজার ৫২৮ টাকার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এরপর মায়া পরিবারের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৩ জুন সূত্রাপুর থানায় মামলা করে দুদক।
এ মামলায় একই বছরের ২২ অক্টোবর চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়। জানা আয় বহির্ভূতভাবে ছয় কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার ৪১৫ টাকার সম্পদ অর্জন এবং দুদকে পাঁচ কোটি আট লাখ ৬৫ হাজার ১৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় মায়া ছাড়াও তাঁর স্ত্রী পারভিন চৌধুরী, দুই ছেলে রাশেদুল চৌধুরী ও সাজেদুল চৌধুরী দিপু এবং দিপুর স্ত্রী সুবর্ণা চৌধুরীকে আসামি করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/11-04-2016/মইনুল হোসেন