muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

‘পুলিশ সাইবার ব্যুরো’ গঠনের দাবি

দেশে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটকেন্দ্রিক যেকোনো অপরাধমূলক কাজ নিয়ন্ত্রণে ‘পুলিশ সাইবার ব্যুরো’ নামক একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠনের দাবি জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ এ পুলিশের পক্ষ থেকে এই দাবি উপস্থাপন এবং পুরনো দাবিগুলো পূরণের তাগিদ দেয়া হয়। পুলিশ সপ্তাহের ৫ম দিন শনিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে শনিবার রাত ৮টার দিকে শুরু হয় এ সভা। চলে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত। আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান।

এতে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, পুলিশ সদরদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় পুলিশের ১১ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পুলিশের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়া পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ রোধ ও তদন্তে শুধুমাত্র ডিএমপিতে (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) পুলিশের আলাদা ইউনিট রয়েছে। জেলাপর্যায়ে কোথাও নেই। ডিবি পুলিশের একটা অংশ কাজ করে। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ রোধে আলাদা ইউনিট গঠন প্রয়োজন। যার নাম হতে পারে ‘পুলিশ সাইবার ব্যুরো’। এটি একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে বিদ্যমান পুলিশ কাঠামোয় থেকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। এ ইউনিটের অধীনে পিবিআইর আদলে প্রতি জেলায় সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করা হবে। জেলায় নেতৃত্বে থাকবেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তার অধীনে থাকবেন দুজন এএসপি, চারজন ইন্সপেক্টর, আটজন এসআই, ১৬ জন এএসআই। এর সঙ্গে থাকবে সাপোর্ট ফোর্স। জেলা সাইবার টিম জেলার এসপি ও বিভাগীয় প্রধানদের মাধ্যমে সাইবার ব্যুরো অফিসকে রিপোর্ট করবে।

এদিকে মতবিনিময় সভায় ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাব মহাপরিচালকসহ পুলিশ বাহিনীতে সচিব পদমর্যাদার ১০টি পদ ‘গ্রেড-১’ অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) পদকে চার তারকা জেনারেলের (সেনাপ্রধান) পদের সমান করার প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া পুলিশ সদস্যদের খেলাধুলার জন্য স্বতন্ত্র স্পোর্টস ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও কমপ্লেক্স তৈরি, থানা পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গাড়ি সরবরাহ, পর্যাপ্ত ফুয়েল সরবরাহ, পুলিশে কর্মরত সাধারণ কর্মীদের (সিভিল স্টাফ) আজীবন রেশন নিশ্চিত করা, পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর পর তাদের পেনশন সুবিধা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিও উত্থাপন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি-দাওয়া ও সমস্যাগুলো শোনেন। কিছু দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সভায় উপস্থিত সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সচিবকে নির্দেশ দেন তিনি। কিছু বিষয় দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু এই রাজারবাগ মাঠে বলেছিলেন, তোমরা জনগণের পুলিশ হবে। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আজ আপনারা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। আজ পুলিশ জনগণের সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল ও আস্থায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও জলদস্যু দমনে সাফল্য অর্জন করেছেন। বান্দরবানে বড় ধরনের জঙ্গি আস্তানায় সাহসিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে সফল হয়েছেন।

জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো, আমিনুল ইসলাম খান বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। সবগুলো প্রস্তাবই অত্যন্ত যৌক্তিক। পুলিশের কাজের ধরণ অনুযায়ী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশের যতটুকু সার্ভিস দেয়ার কথা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে আমরা সবটুকু সার্ভিস দেয়ার চেষ্টা করেছি। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় পুলিশের প্রতিটি সদস্য জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ করেছেন। আমাদের দায়িত্ব ছিলো কোয়ারেন্টাইন এনফোর্স করা, স্বাস্থ্যবিধি এনফোর্স করা। এর বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সেবা করেছে পুলিশ।

‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে পুলিশ আছে জনতার পাশে’- এ প্রতিপাদ্যে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ৩ জানুয়ারি শুরু হয় পুলিশ সপ্তাহ- ২০২৩। ওই দিন সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য পুলিশ সপ্তাহ রোববার শেষ হয়।

Tags: